কে এই শরিফুল, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে ইতিহাস গড়লেন যিনি!

জাতীয় ডেস্ক

আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৫:২১ পিএম

কে এই শরিফুল, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে ইতিহাস গড়লেন যিনি!

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি-আমেরিকান শরিফুল এম. খান মার্কিন সামরিক বাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ায় তাকে নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন, এই পদমর্যাদা অর্জনকারী প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তার এই সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বাংলাদেশি-আমেরিকান জনগোষ্ঠীর জন্যও এক বিশাল গৌরবের বিষয়।

কে এই শরিফুল এম. খান?

বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী শরিফুল এম. খান একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। তিনি ১৯৯৭ সালে ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন এবং রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি মহাকাশ ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রণ ও উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার ওপর কাজ করে একজন দক্ষ স্যাটেলাইট অপারেটর হিসেবে অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

তার কর্মজীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো-

শিক্ষাগত যোগ্যতা: তিনি একাধিক মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা, সামরিক কৌশল, এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত অধ্যয়ন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি।

গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব: বর্তমানে তিনি ‘গোল্ডেন ডোম ফর আমেরিকার’ স্টাফ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পদে তিনি বহুস্তরের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য কৌশল, নীতি, পরিকল্পনা, এবং আন্তবিভাগীয় বিষয়গুলো সমন্বয় করেন। এছাড়া, তিনি বিভিন্ন জাতীয় গবেষণাগার, শিল্পখাত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্ব স্থাপনে কাজ করছেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে অবদান: তিনি ২০০১ সালে কুয়েতের আলী আল সালেম বিমানঘাঁটিতে এবং ২০০৭ সালে ‘অপারেশন সাইলেন্ট সেন্ট্রি’র ডিপ্লয়মেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা: কর্মজীবনে তিনি ডিফেন্স মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেল এবং মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেলসহ অসংখ্য সামরিক পদক ও সম্মাননা লাভ করেছেন।

কেন তাকে নিয়ে এত মাতামাতি?

শরিফুল খানের এই পদোন্নতি একাধিক কারণে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত।

প্রথমত, তিনি মার্কিন সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে উন্নীত হওয়া প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি-আমেরিকান। তার এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক সম্মানজনক পরিচয় তুলে ধরেছে। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখেন।

দ্বিতীয়ত, এটি বাংলাদেশি-আমেরিকান সম্প্রদায়ের জন্য অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার এই সাফল্য দেখায়, কঠোর পরিশ্রম, মেধা এবং একাগ্রতা থাকলে যেকোনো অভিবাসীই বিদেশের মাটিতে সফল হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসও তাকে “আমেরিকার উৎকর্ষের অনন্য প্রতীক এবং বাংলাদেশি-আমেরিকান জনগোষ্ঠীর জন্য পথপ্রদর্শক” হিসেবে উল্লেখ করেছে।

তৃতীয়ত, তার এই অর্জন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরে। তার সাফল্যের মাধ্যমে উভয় দেশের মানুষ একে অপরের অর্জনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্মান বৃদ্ধি করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জুন মাসে যেসব সামরিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য মনোনীত করেছিলেন, শরিফুল খান তাদের মধ্যে একজন। গত ২০ আগস্ট পেন্টাগনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তার অভিষেক হয়, যেখানে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান মার্কিন বিমানবাহিনীর ভাইস চিফ জেনারেল শন ব্র্যাটোন।

সব মিলিয়ে, শরিফুল এম. খানের এই পদোন্নতি একটি ব্যক্তিগত অর্জন ছাপিয়ে একটি জাতিগত ও সামাজিক বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তার সাফল্য বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে নতুন স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করছে এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

Link copied!