বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত এখনও শুকায়নি। এর মধ্যে খবর এসেছে, বন্যার কবলে পড়েছে দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তরাঞ্চল। এর মধ্যেই ১৫ জেলার লাখো বাসিন্দা পানিবন্দী মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। চলমান বন্যা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে ও বন্যা কবলিত জেলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগামী মাসে (আগস্ট) নতুন করে বন্যার আশঙ্কা নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা।
গতকাল শনিবার (৬ জুলাই) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “খুব সুনির্দিষ্ট করে বলার সময় এখনও আসেনি। তবে আগস্টে আরেকটা মৌসুমি বন্যার ঝুঁকি আছে। সেই বন্যায় কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে কিংবা বন্যা স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি নাকি দীর্ঘ মেয়াদি হবে- সেটা ধারণা করার মতো তথ্য-উপাত্ত এখনও আমাদের হাতে আসেনি।”
তিনি আরও বলেন, “তবে অতীত ইতিহাস অনুযায়ী দুটি করে পিক আসে। এরই মধ্যে বন্যা চলমান রয়েছে। বর্ষা মাত্র শুরু হয়েছে এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চলতি মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।”
রায়হান যোগ করেন, “আরও বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। এছাড়া লা নিনা সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনাও আমরা দেখতে পাচ্ছি। এসব মিলিয়ে এবং ঐতিহাসিক পরিসংখ্যানে আলোকে বলা যায়, আগস্টে আরেকটি বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।”
আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান বলেন, “আবহাওয়া মডেল অনুসারে লা নিনা বর্তমানে নিরপেক্ষ অবস্থায় আছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে লা নিনা সক্রিয় হতে শুরু করবে ও এই অবস্থা আগামী বছরের শুরুর দিকেও থাকবে।”
এল নিনোর ফলে পৃথিবীর কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হয়, আবার কোথাও অনাবৃষ্টি বা তুলনামূলক কম বৃষ্টি এবং কখনও কখনও খরা হয়। লা নিনা হলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা এবং অতিবৃষ্টি দেখা দেয়। ২০১৭ ও ২০১৮- এই দুই বছরে গরম বেশি অনুভূত হওয়া অনেক পরিবেশবিদ একে ‘লা নিনা বছর’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। বেশির ভাগ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সময়ের মধ্যেই হয়েছে ও অনেকটা লা নিনার কারণে হয়েছে।
বর্তমানে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফেনী, রাঙ্গামাটি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, কক্সবাজার জেলায় লাখো বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এর আগে গত ২৬ মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের ২০ জেলায় প্রায় ৬ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪৮ জেলার কৃষিতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব পড়ে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৩ জেলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়।