গাজীপুর

নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল!

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২৭, ২০২৩, ০৫:২৮ পিএম

নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল!

সদ্যই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গাজীপুর সিটির নির্বাচন। ওই নির্বাচন ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় ছিল গাজীপুর। সারাদেশের চোখ ছিল ওই জেলার দিকে। সেই আলোচিত জেলাতেই ঘটে গেল আরেকটি ঘটনা। ওই জেলারই একটি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে নবজাতক বিক্রি করে! শ্রীপুর পৌরসভার ‘শ্রীপুর চৌরাস্তা নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার শ্রীপুরে সিজারিয়ান অপারেশনের পর এক নবজাতককে বিক্রি করে এক দম্পতি হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ করেছেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রশাসন শুক্রবার সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জরিমানা ও হাসপাতাল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়।

জানা যায়, প্রিয়া-রাসেল দম্পতি শ্রীপুর পৌরসভার শ্রীপুর-কাপাসিয়া সড়ক এলাকায় ভাড়া থাকেন। তাদের ঘরে ৪ ও ৫ বছরের আরও দুটি সন্তান রয়েছে। প্রিয়া গৃহিনী এবং রাসেল দিনমজুর। রাসেল ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার মালিডাঙ্গা গ্রামের আবু হানিফার ছেলে। প্রিয়া বরিশালের হিজলা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের ফারুখ হাওলাদারের মেয়ে। ওই এলাকায় তারা প্রায় দুই মাস ধরে বাস করে আসছেন।

রাসেলের ভাষ্যমতে, গত ২১ মে প্রসব ব্যথা উঠলে স্ত্রীকে নিয়ে নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে ওই হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর তাঁর স্ত্রীর পরীক্ষা করে ওইদিনই সিজারিয়ান অপারেশন করার পরামর্শ দেয়। দ্রুত অপারেশন না করালে মা ও নবজাতকের সমস্যা হওয়ার কথা জানান। রাসেল তাঁর কাছে টাকা না থাকার কথাও জানান হাসপাতালের পরিচালককে। এ কথা শুনে পরিচালক রাসেল ও তাঁর স্ত্রীকে নবজাতক বিক্রি করার প্রস্তাব দেন। নবজাতক ছেলে হলে ৫০ হাজার এবং নবজাতক মেয়ে হলে ৩০ হাজার টাকা দেওয়োর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে সিজারিয়ান খরচের টাকা পরিশোধের পর তাদের ওই টাকা দেওয়ার কথা জানান। ওইদিন ২১ মে সন্ধ্যায় প্রিয়ার সিজারিয়ান অপারেশন করালে তাঁর মেয়ে হয়।

পরদিন হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে ওই দম্পত্তির নবজাতক বিক্রি করে দেন। তাদের নবজাতককে কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে জাহাঙ্গীর নবজাতকের ক্রেতার পরিচয় গোপন রাখেন। পরে জাহাঙ্গীর দম্পতিকে ১৪ হাজার টাকা দেন। পরিচালক বলেছেন, নবজাতককে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ওই টাকার মধ্যে ১৬ হাজার টাকা হাসপাতালের সিজারিয়ান বিল পরিশোধ করে বাকি ১৪ হাজার টাকা তাদের বুঝিয়ে দেন। ২৪ মে সন্ধ্যায় নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধের বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে স্থানীয় সাংবাদিকেরা হাসপাতালে গিয়ে তথ্য চাইলে তাঁরা বিষয়টি অস্বীকার করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।

হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর দাবি করেন, প্রিয়া-রাসেল দম্পতির সম্মতি নিয়েই নবজাতককে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন বলেন, বিষয়টি জানার পর শুক্রবার শ্রীপুর চৌরাস্তা নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় ওই হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো. নাসিম বলেন, নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধের বিষয়ে কেনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি শুনেছি এবং জানতে পেরেছি ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। অভিযোগ আসলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন এবং অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। 

Link copied!