ছবি: সংগৃহীত
দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২০০ ছুঁই ছুঁই। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ রোগে আরও তিনজনের প্রাণ গেছে। এতে চলতি বছর মৃত্যু ১৯৮ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই মারা গেছেন ৭৬ জন, যা মোট মৃত্যুর ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এক দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে আরও ৫৫৬ জন ভর্তি হয়েছেন। সেপ্টেম্বরে এ ভাইরাস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন। এতে চলতি বছর হাসপাতালে মোট ৪৭ হাজার ৪৩২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এ হিসাবে কেবল সেপ্টেম্বরেই মোট রোগীর ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসই ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা– উভয় দিক দিয়েই এ সব মাসকে ছাড়িয়ে গেছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, প্রতিরোধযোগ্য হলেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে। তিনি বলেন, এমন মৃত্যু সরকারের চরম ব্যর্থতা। এ মৃত্যু থামানো সম্ভব; কিন্তু তার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা দৃশ্যমান নয়।
এর আগে জুলাইয়ে ১০ হাজার ৬৮৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬, এপ্রিলে ৭০১ ও মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন।
চিকিৎসাধীন রোগী দুই হাজার ছাড়াল
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২ হাজার ৩৪৮ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৭৩ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৫৭৫ জন চিকিৎসাধীন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায়– ২১৪ জন। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ৭৯ জন, বরিশালে ১৩৭, চট্টগ্রামে ৭০, ময়মনসিংহে ২৮, রাজশাহীতে ২৫ ও সিলেটে তিনজন নতুন করে ভর্তি হয়েছেন।
এক দিনে মারা যাওয়া তিনজনের বয়স ৩৮, ৬৮ ও ৩৩ বছর। তারা সবাই বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা; তিনজনই পুরুষ। তারা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরগুনা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এবং আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে এখনও পুরুষের সংখ্যাই বেশি। চলতি বছর মোট আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ পুরুষ ও ৪০ শতাংশ নারী।
সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ২১-৩০ বছর বয়সীরা
বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। এ সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৫০০। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বয়সসীমার মানুষ কর্মজীবী ও চলাফেরায় বেশি সক্রিয় হওয়ায় তারা বেশি মশার সংস্পর্শে আসছেন।
অক্টোবরে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কিন্তু চলতি বছর টানা বৃষ্টির কারণে প্রকোপ অক্টোবর পর্যন্ত গড়াতে পারে। তিনি শুধু সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর না করে এলাকাভিত্তিক মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানান, থেমে থেমে বৃষ্টি ও মশক নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে।