দেশব্যাপী করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করতে বলা হলেও তেমন কোন সাড়া পাচ্ছে না সরকার।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে প্রতিদিন ২ লাখ করে মোট ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও টীকা গ্রহণের জন্য ‘সুরক্ষা অয়েবসাইটে’ গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫০ হাজার জন নিবন্ধন করেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অনালাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম আগামী ৫ তারিখ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ি টীকা নিতে আগ্রহীদের তেমন সাড়া মেলেনি। ফলে সরকারের এই পরিকল্পপনা ভেস্তে যাওয়ার আশংকা করছেন অনেকে।
গত ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার ভুলের কারণে নিবন্ধন করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করছেন অনেকে। এ অবস্থায় টিকা নিতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প পন্থা হিসেবে প্রতিটি কমিনিউনিটি হাসপাতালে রেজিস্ট্রেশন বুথ চালু করার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিলবোর্ড ও প্লে কার্ড বিতরণসহ নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম।
এদিকে টিকা নিবন্ধন সম্পর্কিত অনলাইনের জটিলতা ও জনগণের আগ্রহের ঘাটতির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ডীন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ দ্য রিপোর্টকে বলেন, টিকা নিবন্ধনের প্রক্রিয়া বেশ জটিল যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা মুশকিল। তাছাড়া, টিকা নেওয়ার ব্যাপারে তেমন প্রচার-প্রচারণা এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম না থাকায় জনগণ এ বিষয়ে অনেকটাই অজ্ঞাত।
তিনি আরোও বলেন, ভারত থেকে কেনা এই টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরণের ভয়ভীতি রয়েছে যা একেবারেই তাদের ভ্রান্ত ধারণা। বাংলাদেশ এর আগেও হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ আরো অনেক রোগ ও মহামারির ভ্যাক্সিন ভারত থেকে আমদানি করেছে এবং দেশের জনগণ তার সুফলও ভোগ করেছে।
উপমহাদেশের অনেক দেশ ভারত থেকে করোনার টিকা ও ওষুধ আমদানী করছে। তাই টিকা নেওয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
নিবন্ধনের সংখ্যা কম হলেও ভ্যাকসিন কর্মসূচী সফল হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক চোধুরী।
তিনি বলেন, টিকা নিয়ে অনেকের মধ্যে ভীতি থাকলেও টিকা প্রদানকালে সেই ভয়-ভীতি কাটিয়ে উঠবেন এবং তাদের দেখাদেখি অনেকেই উৎসাহিত হবেন। টিকা নিবন্ধন সময়সীমা আরো বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার জন্য 'সুরক্ষা' নামের নিবন্ধন অ্যাপটি বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে উন্মুক্ত করা হবে। এখন এটি সুরক্ষা ওয়েবসাইট আকারে আছে। ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে কিছু অভিযোগ এসেছে। এগুলো আইসিটি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। তারা এটি সমাধান করে দেবে।
দেশব্যাপী টিকা দেওয়ার জন্য ঢাকায় ৪৯টি অন্যান্য জেলাগুলোতে ৬১৩টি টিকা কেন্দ্র রয়েছে বলে তিনি জানান।
পেশার ভিত্তিতে ভাগ করা ১৬টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা এই টিকা প্রদানের প্রথম পর্বে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রতিরক্ষা কর্মী, সরকারী কর্মচারী, সাংবাদিক এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন।