সারাদেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। রাজধানী ঢাকা থেকেও আমরা তা টের পাচ্ছি। পুড়ছে চরাচর। আজ বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। মারাত্মক গরম মানুষের শরীরে নানা ধরনের প্রভাব ফেলে। এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দাবদাহে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১২৫ মিলিয়ন। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি বয়োবৃদ্ধ, শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের। ২০০৩ সালে ইউরোপে তীব্র দাবদাহের কারণে ৭০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। ২০১০ সালে রাশিয়াতে ৫৬ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল দাবদাহ।
যারা বাইরে কায়িক পরিশ্রম করেন যেমন কৃষক অথবা রিকশাওয়ালা, তাঁরা ঝুঁকিতে থাকেন বেশি, কারণ তাঁরা সূর্যের নিচে বেশি সময় কাটান।
গরমে শারীরিক শ্রম শরীরকে আরও গরম হয়ে ওঠে। বাইরে যারা কায়িক পরিশ্রম করেন তাদের সাথে সাথে খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেও এটি বেশি ঘটে।
ঝুঁকি কমাতে নিতে হবে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম।
মানুষের শরীরের রক্ত গরম হয়ে থাকে। মানুষের শরীর আভ্যন্তরীণ তাপ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে চলে। আশপাশে পরিবেশ যদি গরম হয়ে ওঠে তাহলে মানুষ তাঁর শরীর থেকে সেটি দূর করার জন্য কাজ করে।
রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন বিশেষজ্ঞ জানান, আমাদের শরীরের উপরে যদি তাপ বেশিক্ষণ থাকে তা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র শরীরের উপরিভাগ ও ত্বকে বেশি রক্ত পাঠাতে থাকে। সে কারণে বেশি গরম লাগলে অনেক মানুষের চেহারা লাল দেখায়। এটা হিটস্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
হিটস্ট্রোক
তীব্র দাবদাহ হিটস্ট্রোকের অন্যতম কারণ। এর নানা ধরনের লক্ষণ রয়েছে। প্রধান কয়েকটি হলো মাথাব্যথা হবে ও মাথা ঘুরবে। শারীরিক অস্বস্তি, অস্থিরতা, বিভ্রান্তি দেখা দেবে।
শরীরের ত্বক গরম, লাল ও শুকনো দেখাবে। আক্রান্ত ব্যক্তির সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা ধীর হয়ে আসবে। তার নাড়ীর গতি তীব্র হতে থাকবে। শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে যাবে। আক্রান্ত ব্যক্তি এক পর্যায়ে জ্ঞানও হারাতে পারে।
ঘামের সাথে গরমের সম্পর্ক
গরমে আমাদের অনেক ঘাম হয়। ঘাম মানুষের শরীরকে ঠাণ্ডা করার একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু চারপাশের তাপ যদি আমাদের ত্বকের তাপের সমান বা বেশি হয় তাহলে সেটি কম কাজ করে।
অতিরিক্ত গরমে ত্বকে ফুসকুড়ি উঠতে পারে। বাইরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রির উপরে উঠে যাওয়া বিশেষ করে বিপজ্জনক বলছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, বাতাসে আর্দ্রতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর্দ্রতা বেশি হলে ঘাম হতে সমস্যা হয়। আর তাতে শরীরের নিজেকে ঠাণ্ডা রাখার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
শরীরের ওপর প্রভাব
প্রাথমিকভাবে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। ত্বক ফুলে যেতে পারে। গরম বেশি লাগলে মানুষের শরীর ঠাণ্ডা হতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে।
রক্ত পরিবহন পথ বড় হয়ে ওঠে। ত্বক ঘাম বের করতে বেশি পরিশ্রম করে। ত্বক ফুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। পা ও গোড়ালিতে এটি ঘটে। শরীর থেকে বেশি ঘাম বের হয়ে যাওয়া এবং সেই সাথে যদি রক্তচাপ বেড়ে যায় তাহলে আরও বড় সমস্যা হতে পারে।
হার্ট-অ্যাটাক
দীর্ঘ সময় গরমে থাকলে হৃদযন্ত্রে উপর প্রভাব পরতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার হার্ট ফাউন্ডেশন জানাচ্ছে, বেশি ঘামলে শরীর থেকে পানি কমে যায়। তাতে রক্তের পরিমাণও কমে যায়। তখন হৃদযন্ত্র শরীরের নানা যায়গায় রক্ত পাঠাতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে।
যাদের হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে বা যারা ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের এমন পরিস্থিতিতে হার্ট-অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪২ পর্যন্ত গেলে, সেই সাথে যদি আর্দ্রতা বেশি থাকে তখন এমন সম্ভাবনা বেশি হয়ে থাকে।
বারবার পানিতে মুখমন্ডল ধুয়ে নিতে হবে, পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি।
দাবদাহে যা করবেন
১. বাইরে কাজ কমিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সূর্য থেকে দূরে থাকুন।
২. এই সময়টাই দিনের সবচাইতে গরম সময়। ঘর ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন।
৩. ঘরে পর্দা ব্যবহার করে গরম ঢুকতে বাধা দিন। অথবা জানালার বাইরে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয় এমন বস্তু দিয়ে রাখুন।
৪. প্রচুর পানি খেতে হবে। গোসল করুন এবং বারবার মুখ ও শরীরে পানির ঝাপটা দিন। যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে।
৫. ঢিলেঢালা এবং বাতাস পরিবহনকারী পোশাক পরুন। বাইরে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। তীব্র দাবদাহ চলাকালীন দিনে তিন ঘণ্টার বেশি বাইরে কাটাবেন না। এই সময়ের মধ্যেও ঘনঘন ছায়ায় চলে যান।
৬. অতিরিক্ত অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বর্জন করুন।
নিজের যত্ন নিন এবং পরিবার ও বন্ধুদের খবর নিন, সতর্ক করে দিন। যাদের কোনো শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাদের একটু বেশি খোঁজখবর নিন।
বিবিসি অবলম্বনে