বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়ার বাহক প্রতি ১৪ জনে একজন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৮, ২০২৩, ০৬:২১ পিএম

বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়ার বাহক প্রতি ১৪ জনে একজন

সচেতন হোন, শেয়ার করুন এবং যত্ন নিন। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ ৮ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া দিবস।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১৪ জনে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক। ৭০ হাজারেরও বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৬ হাজার শিশু বিভিন্ন রকমের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। 

রক্তস্বল্পতাজনিত একটি বংশগত রোগ থ্যালাসেমিয়া। এই রোগে আক্রান্তরা ছোট বয়স থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকে। রোগটি হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরির ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলোয় এ সমস্যা বেশি থাকলেও বর্তমানে পৃথিবীর সব দেশেই এ রোগী পাওয়া যায়।

থ্যালাসেমিয়া রোগীরা তাদের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত তৈরি করতে পারে না, তাই অন্যের রক্ত ট্রান্সফিউশন নিয়ে তাদের জীবন চালাতে হয়। তারা সাধারণত প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকে। চিকিৎসা করা না হলে এ রোগীরা রক্তশূন্যতায় মারা যায়। 

থ্যালাসেমিয়ার উপসর্গ থ্যালাসেমিয়া রোগের ধরনের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশুর মধ্যে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।

ছয় মাস বয়সের পর থেকেই থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণগুলো ফুটে উঠতে থাকে। এ রোগের কারণে শিশুদের জন্ডিস হতে পারে এবং ত্বক ফ্যাকাশে দেখাতে পারে। এছাড়াও বুকে ব্যথা, তন্দ্রা-ক্লান্তি, নিশ্বাসের সমস্যা, হৃদস্পন্দনের সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় থ্যালাসেমিয়া হলে শিশুরা আর খেতে চায় না বা খাবারে অনীহা দেখা দিতে পারে। এতে বৃদ্ধি বিলম্বও হয়ে থাকে। এছাড়াও মাথাব্যথা, মাথা ঘুরানো বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইনফেকশন বা সংক্রমণে সহজেই প্রভাবিত হওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী অন্যটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক। যারা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী, তাদের প্রতি মাসেই এক-দুইবার রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয় এবং তারা সারা জীবন এ রোগ বহন করে বেড়ান। এদের অনেকেই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। 

বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করে এদের চিকিৎসা করা হলে এদের সুস্থ করার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন যেমন জটিল ও ব্যয়বহুল তেমনি অপ্রতুলও। 

অপরদিকে যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তারা এই রোগ বহন করেন এবং আরেকজন বাহককে বিবাহ করলে তাদের সন্তানদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি একজন সুস্থ-স্বাভাবিক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন, তবে তাদের সন্তানদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

কাজেই সমাজের সর্বস্তরে এই রোগের ব্যাপকতা এবং একজন বাহক যাতে অন্য একজন বাহককে বিয়ে না করে বরং স্বাভাবিক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন সে বিষয়টির প্রচারণা বাড়ানো হলো এ রোগের প্রবণতা কমে আসতে পারে। 

Link copied!