বাড়ছে করোনা, সিট সংকটে হাসপাতাল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৪, ২০২১, ০৬:১৫ পিএম

বাড়ছে করোনা, সিট সংকটে হাসপাতাল

‘আইসিইউর আশায় সব হাসপাতালেই ঘুরছি। এখন কেবিনতো দুরের কথা সাধারণ বেডই পাচ্ছি না।’ মুগদা হাসপাতালের সামনে আজ বুধবার দুপুরে কান্না জড়িত কন্ঠে জুয়েল রানা একথা বলছেন। তার করোনা আক্রান্ত পিতার জন্য আইসিইউ খুঁজছে সকাল থেকেই। এখন শেষ উপায় হিসেবে ঢাকা মেডিকেলের সাধারণ করোনা ইউনিটের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।

গত কিছুদিন থেকেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যার ফলে পুনরায় সিট সংকটে পড়ায় রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আইসিইউ, কেবিন পরিপূর্ণ থাকায় সাধারন বেডও এখন ভর্তি করোনা রোগী দ্বারা। 

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, ওই হাসপাতালে এই মুহূর্তে কোনো আইসিইউ খালি নেই। আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি ৬৯ জন। কেবিনেও সিট খালি নেই। তিনটি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড ওয়ার্ডে ২৭৩ জন ভর্তি আছেন। যা হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও এখানে মাত্র ৯৮ জন ভর্তি ছিলেন।

প্রায় একই অবস্থা রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও। নমুনা পরীক্ষার জন্য যারা আসছেন তাদের অনেকেই পজিটিভ শোনার পরে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছেন। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি রোগী।

২৪ মার্চ রাতে রাজিব আহমেদ নামে এক ব্যাংকার কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরে রাজধানীর প্রায় সকল বেসরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানতে পারেন কোথাও কোনো জেনারেল বেড বা কেবিন কিছু খালি নেই। আর এমন অবস্থায় তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেন। কিন্তু সেখানেও প্রায় একই অবস্থা তখন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য বুলেটিন থেকে জানা যায়, রাজধানীতে সরকারি হাসপাতালগুলো দুই হাজার ৩৪৯টি বেডের মাঝে শুধুমাত্র পাঁচটি বেড খালি আছে। এর মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭৫ জেনারেল বেডের ভর্তি আছেন ৩৯৩ জন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ৯০৮টি বেডের মাঝে খালি আছে ৪৭টি আইসিইউ বেড।

দেশে সংক্রমণ বিগত ৯ মাসের তুলনায় আজ বুধবার সবচেয়ে বেশি হয়। এদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয় ৩৫৬৭ জন।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে করোনা পরিস্থিতি খারাপে দিকে। আর এমন অবস্থায় যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের পাওয়া যাওয়ার সংবাদ আশঙ্কাজনক। একই সঙ্গে দেশের মানুষ যদি এখনও স্বাস্থ্য বিধি এড়িয়ে চলে মাস্ক না পরে তবে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ, আর তখন হাসপাতালে জায়গা দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট একটা কারণ হতে পারে তবে মূল কারণ কখনোই না।; এক্ষেত্রে সংক্রমণ বাড়ার জন্য মূলত দায়ী আমাদের জীবনাচরণে স্বাস্থ্যবিধিকে গুরুত্ব না দেওয়া। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসমাগম এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এই মুহূর্তে খুবই জরুরি এবং একই সঙ্গে মাস্ক পরাটাও। ভ্যাকসিন দেওয়ার পড়েও অনেকে রিল্যাক্স হয়ে ঘুরছে। এটাও বিপদজনক হয়ে উঠছে আমাদের জন্য। কারণ ভ্যাকসিন দিলেই সবার মাঝে অ্যান্টিবডি গড়ে উঠবে আর করোনা সংক্রমণ হবে না এমনটা কিন্তু কোথাও বলা হয় নাই। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।

Link copied!