পুরো বিশ্ব এখন করোনায় কাবু। যদিও টিকা কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। তারপরও এ সময়টায় নানা শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে অবসাদ, দুশ্চিন্তা, মানসিক অশান্তি। এসবের সংমিশ্রণে বেড়েছে শারীরিক রোগ, যার মধ্যে স্ট্রোক অন্যতম। দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এখন এই স্ট্রোক। দেশে বর্তমানে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি বেশি থাকা, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য গ্রহণ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দেশে এসব গ্রহণের হার বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মানুষের অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের প্রবণতা। আর এসব স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বহু গুনে।
‘প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ ২৯ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। সারাবিশ্বে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ ধরা হয় স্ট্রোককে। বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে প্রতি ৬ জনে ১ জনের।
মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ ক্যান্সার, যা প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী। এছাড়া অন্যান্য অসংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের নির্দিষ্ট কিছু রোগ এবং ডিমেনশিয়া জীবন কেড়ে নেওয়া রোগের তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
পৃথিবীতে মানুষের মৃত্যুর প্রথম প্রধান কারণ হৃদরোগ। প্রতিবছর সারাবিশ্বে হৃদরোগে মারা যায় প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ। যার শতকরা হার ৮৫ শতাংশ।
করোনাকালে হার্ট অ্যাটাকের পাশাপাশি স্ট্রোকের প্রবণতা বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রি-হেবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাদেক দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, স্ট্রোক তিন ধরনের। মাইল্ড স্ট্রোক, ইসকেমিক স্ট্রোক ও হেমোরেজিক স্ট্রোক। মাইল্ড স্ট্রোকে রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ সাময়িক বন্ধ হয়ে আবারও চালু হয়। ইসকেমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের ও শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধে। হেমোরেজিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে যায়। শরীরের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে চোখে কম দেখা, মাথা ঘোরানো, অচেতন হয়ে পড়া, শরীরের এক দিক অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি স্ট্রোকের বিভিন্ন লক্ষণ। স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ হলো উচ্চরক্তচাপ। সারাবিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর প্রায় ১৫০ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৬০ লাখ লোক মারা যান এবং ৫০ লাখ লোক আজীবনের জন্য বিকলাঙ্গ হয়ে পরেন। বাংলাদেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। দেশে বর্তমানে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৫ লাখ লোক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ভুগছে। প্রতি ১ হাজারে আক্রান্ত হচ্ছে অন্তত ১০ জন।
এক্ষেত্রে সবাইকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ্য রাখতে হবে নিজেকে। যাদের ডাইবেটিকস আছে তাদের সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রিফ্রেশ থাকার পাশাপাশি পরিশ্রম করতে হবে বলেও জানান তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, প্রতিবছর বিশ্বে স্ট্রোকজনিত সমস্যায় ভোগে দেড় কোটি মানুষ। এরমধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মৃত্যু হয় স্ট্রোকে। বাকিদের বরণ করে নিতে হয় স্ট্রোক পরবর্তী পক্ষাঘাতজনিত সমস্যাকে। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকলেও শিশুদেরও স্ট্রোক হতে পারে।
দেশে ক্রমাগতই বাড়ছে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৫ হাজার ৫০২ জন। যা বেড়ে ২০২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৩৬০ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল এর ২০১৮ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে এখন প্রতি হাজারে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন ১১ দশমিক ৩৯ জন মানুষ। প্রায় ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে বাংলাদেশে। স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে ৭ গুণ বেশি। নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। শহরের চেয়ে গ্রামে কিছুটা বেশি স্ট্রোকের প্রকোপ।