জুলাই ৫, ২০২২, ১০:৪৭ এএম
অপরাধী অপ্রাপ্তবয়স্ক কিন্তু অপরাধ গুরুতর। ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু গণ্য হওয়ায় খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধ করেও ছাড় পাচ্ছেন তারা। তাই শিশুদের বয়সসীমা কমানোর চিন্তা করছে সরকার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স কমিয়ে হবে না সমাধান। প্রয়োজন শিশুদের এ ধরনের অপরাধে জড়ানোর মূল কারণ খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া।
গত ২৫ জুন সাভারের হাজী ইউনুছ আলী কলেজ মাঠে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিতু। পরে হাসপাতালে ওই শিক্ষক মারা যান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জিতু গ্রেফতার হয়েছে। বয়স আঠারো বছরের কম হওয়ায় বিদ্যমান আইনে জিতু শিশু হিসেবে গণ্য। শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছর বা এর কম বয়সী যেসব শিশু কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদেরকে কারাগারে নয় পাঠাতে হবে উন্নয়ন কেন্দ্রে। গত বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা করা হয় সিফাত নামে ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে। এ ঘটনায় যে ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় তাদের বয়সও ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। গ্রেফতারের পর সবাই হত্যার কথা স্বীকার করেছে। পরে তাদের পাঠানো হয় কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে।
বয়স বিবেচনায় অপরাধী শিশু বা কিশোর হলেও অপরাধের ধরন পেশাদার অপরাধীদের মতো। এই অবস্থায় শিশুদের বয়স কমানোর চিন্তা করছে সরকার। রবিবার (৩ জুলাই) সংসদে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, দেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে আইনের সংশোধন করা হবে। আইন অনুসারে শিশুর বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে বয়স নির্ধারণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশ বলছে, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনায় শিশুদের জড়িয়ে পড়া গত কয়েক বছরে বেড়েছে যা উদ্বেগজনক।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, বয়স ১৮ বছরের নীচে হওয়া সত্ত্বেও তারা বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদক, কিশোর গ্যাংয়ের মতো ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের বয়স কম হওয়ার কারণে অপরাধ করা সত্ত্বেও আমরা যখন শিশু আইনে অভিযোগপত্র দিয়ে থাকি, তখন তারা আইনের নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে নানা ফাকফোঁকর দিয়ে বের হয়ে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি সময়ে কিশোররা যে ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, সেই অপরাধগুলোর প্রতি আমরা যদি খেয়াল করি বা বিশ্লেষণ করি, তাহলে সেই অপরাধগুলো কিশোর বা শিশু অপরাধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটির মাত্রা অনেকটা ছাড়িয়েছে এবং সেই মাত্রা যেটা ধারণ করছে সেটি প্রাপ্তবয়স্ক বা অ্যাডাল্ট ওফেন্স বলতে যেটা বোঝায় সেটা। আজকে যে কিশোরকে আমি অপরাধপ্রবণ দেখছি বা সে বিভিন্নভাবে প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধ করছে যেমন হত্যা-ধষর্ণ করা কিংবা মাদক বাণিজ্য করা, এলাকায় বিশৃঙ্খল আচরণ করা, জনবিরোধী কাজ করা এই কাজগুলো সে একার তাড়নায় করছে, সেটা এমন নয়। এর পেছনে কেউ না কেউ আছে। এর পেছনে কুশীলব আছে, পৃষ্টপোষক আছে। সমাজ ও অপরাধ নিয়ে কাজ করা এ বিশেষজ্ঞ বলছেন, বয়স কমিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। শিশু কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পেছনে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে বলে মত অপরাধ বিজ্ঞানীদের।