মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের গুপ্তহত্যার চেষ্টা

তানজিলা তাসনিম

জুলাই ১৫, ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টায় সমাবেশে বন্দুক হামলা শুরু হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার আগেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের লক্ষ্য করে রাজনৈতিক সহিংসতার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই খবর সয়লাব হয়েছে।

আব্রাহাম লিংকন
আব্রাহাম লিংকন

আব্রাহাম লিংকন

লিঙ্কন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি। যিনি প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন। লিংকনকে মাথায় গুলি করার পরে চিকিৎসার যাওয়া হয়েছিল। পরদিন সকালে তিনি মারা যান। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের প্রতি তার সমর্থনকে তার হত্যার পেছনে উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেমস গারফিল্ড

ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসের মাথায় ১৮৮১ সালের ২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ২০তম প্রেসিডেন্ট গারফিল্ডকে হত্যা করা হয়। ওয়াশিংটনের একটি ট্রেন স্টেশনে তাকে গুলি করেছিল চার্লস গুইটো। সেই বছরই সেপ্টেম্বরে সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে সেপ্টেম্বরে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের উপকূলে গুরুতর আহত প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হয়। গারফিল্ডের স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার আর্থার।

উইলিয়াম ম্যাককিনলি

উইলিয়াম ম্যাককিনলি

১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে ম্যাককিনলিকে গুলি করেছিল ডেট্রয়েটের বাসিন্দা লিওন এফ সিজোলগোজ। চিকিৎসকদের আশা ছিল, ম্যাককিনলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু গ্যাংগ্রিন তখন বুলেটের ক্ষতের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাস পরে ১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ম্যাককিনলের মৃত্যু হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট।

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট
ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট

যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট মিয়ামিতে বক্তৃতা দেওয়ার সময় হামলার শিকার হন। ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারির এই হামলায় শিকাগোর মেয়র অ্যান্টন সারমাক নিহত হলেও রুজভেল্ট আহত হননি। গুইসেপ্পে জাঙ্গারাকে এই গুলি চালানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

হ্যারি এস ট্রুম্যান

হ্যারি এস ট্রুম্যান

১৯৫০ সালের নভেম্বরে ৩৩তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট  ট্রুম্যান হোয়াইট হাউসে অবস্থান করাকালীন দুই আততায়ী সেখানে ঢুকে পড়ে। ট্রুম্যান আহত না হলেও হোয়াইট হাউসের এক পুলিশ সদস্য ও এক হামলাকারী গুলি বিনিময়ে নিহত হন। অস্কার কালাজো নামের হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৯৫২ সালে ট্রুম্যান তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন।

জন এফ কেনেডি
জন এফ কেনেডি

জন এফ কেনেডি

১৯৬৩ সালের নভেম্বরে ফার্স্ট লেডি জ্যাকুলিন কেনেডির সঙ্গে ডালাস সফরের সময় কেনেডি আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন। কেনেডিকে দ্রুত পার্কল্যান্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন। হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা পর লি হার্ভে অসওয়াল্ডকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুই দিন পরে ওসওয়াল্ডকে ডালাস নাইটক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি গুলি করে হত্যা করে।

জেরাল্ড ফোর্ড

ফোর্ড ১৯৭৫ সালে সপ্তাহের মধ্যে দুটি হত্যার প্রচেষ্টার মুখোমুখি হলেও কোনও ঘটনাতেই আহত হয়নি। প্রথমে ফোর্ড স্যাক্রামেন্টোতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের সাথে একটি বৈঠকে যাওয়ার সময় চার্লস ম্যানসনের শিষ্য লিনেট স্কুইকি একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল বের করে ফোর্ডের দিকে তাক করলেও বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়নি। ফ্রমে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন ও ২০০৯ সালে মুক্তি পান। এর ঠিক ১৭ দিন পর সান ফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে সারা জেন মুর নামের আরেক নারী গুলি করে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন আর দ্বিতীয় গুলি করার চেষ্টা করার সময় একজন পথচারী তার হাত চেপে ধরে। মুরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল এবং ২০০৭ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

রোনাল্ড রিগ্যান
রোনাল্ড রিগ্যান

রোনাল্ড রিগ্যান

রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন, ডিসিতে জন হিঙ্কলি জুনিয়রের দ্বারা হামলার স্বীকার হন। ১৯৮১ সালের মার্চের শুটিং থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন রিগ্যান। তার প্রেস সেক্রেটারি জেমস ব্র্যাডিসহ আরও তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, যিনি ফলস্বরূপ আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছিলেন। রোনাল্ড রিগানকে গুলি করা হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে একটি মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।

জর্জ ডব্লিউ বুশ
জর্জ ডব্লিউ বুশ

জর্জ ডব্লিউ বুশ

২০০৫ সালে জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলির সঙ্গে তিবলিসিতে এক সমাবেশে যোগ দেওয়ার সময় বুশের দিকে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। কাপড়ে মোড়ানো গ্রেনেডটি যখন প্রায় ১০০ ফুট দূরে পড়েও গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় কেউই আহত হয়নি। ভ্লাদিমির আরুতিউনিয়ানকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।

থিওডোর রুজভেল্ট
থিওডোর রুজভেল্ট

থিওডোর রুজভেল্ট

১৯১২ সালে নির্বাচনী প্রচারণার সময় মিলওয়াকিতে গুলিবিদ্ধ হন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। রুজভেল্টের আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তৃতীয় পক্ষের প্রার্থী হিসেবে আবার প্রার্থী ছিলেন। জন শ্রাঙ্ককে গ্রেপ্তার করার পরে তার বাকি জীবন মানসিক হাসপাতালে কাটানোর আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

রবার্ট এফ কেনেডি
রবার্ট এফ কেনেডি

রবার্ট এফ কেনেডি

১৯৬৮ সালের ক্যালিফোর্নিয়া প্রাইমারিতে জয়ের জন্য বিজয় ভাষণ দেওয়ার কয়েক মুহূর্ত পর লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হোটেলে নিহত হন এই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী।

কেনেডি ছিলেন নিউ ইয়র্কের একজন মার্কিন সিনেটর এবং রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির ভাই। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। সিরহান সিরহানকে হত্যায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। গত বছর মুক্তির জন্য তার সর্বশেষ আবেদন প্রত্যাখ্যানের পরে সেটা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত করা হয়।

জর্জ সি ওয়ালেস
জর্জ সি ওয়ালেস

জর্জ সি ওয়ালেস

জর্জ সি ওয়ালেস ১৯৭২ সালে মেরিল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার জন্য নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তাকে গুলি করেছিল সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনা কোমর থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান তিনি। বিচ্ছিন্নতাবাদী মতাবলম্বী হিসেবে আলাবামার গভর্নর ওয়ালেস পরিচিত ছিলেন। পরে সেই অভিমত ত্যাগ করেছিলেন তিনি। আর্থার ব্রেমারকে গুলি করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০০৭ সালে মুক্তি পান তিনি।

Link copied!