আগস্ট ২৫, ২০২৩, ১১:৩৪ এএম
বিমান দুর্ঘটনায় রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্য সরবরাহকারী ভাগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের নিহতের পর অবশেষে নিরবতা ভেঙে তার পক্ষে সাফাই গাইলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বুধবারের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে একটি এমব্রায়ার লিগ্যাসি বিমান মস্কোর উত্তরে তিভিয়ের অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়। এতে আরোহীর সবাই নিহত হন। ওই বিমানে প্রিগোজিন এবং তার প্রধান সহচর দিমিত্রি ইউতকিন ছিলেন বলে রাশিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত বুধববার ভাগনার গ্রুপ প্রধানের মৃত্যু নিয়ে বিশ্বজুড়ে রীতিমত হইচই পড়ে যায়। এনিয়ে নিরব থাকলেও বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রিগোজিনকে নিয়ে প্রথমবার মুখ খোলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন ও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “বুধবার যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটির ঠিক কী হয়েছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে তদন্ত করতে সময় লাগবে।“
প্রিগোজিন সম্পর্কে পুতিন বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রিগোঝিনকে জানি, সেই ১৯৯০ এর দশক থেকে। তিনি জটিলতায় ভরা ভাগ্যের অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন। তবে জীবনে বেশ কিছু গুরুতর ভুলও করেছিলেন।”
বিমান বিধ্বস্ত হওয়া প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, “প্রাথমিক তথ্যে ওই বিমানে ভাগনার কোম্পানির কর্মীরা ছিল বলে জানা গেছে।”
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “আমি এটা স্মরণ রাখতে চাই যে এই ব্যক্তিরা (ভাগনার গ্রুপ) ইউক্রেইনের নব্য-নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আমরা এটা মনে করতে পারি এবং জানি এবং আমরা কখনো এটা ভুলে যাব না।”
ইয়েভগেনি প্রিগোজিন এক সময় পুতিনের খুবই ঘনিষ্ঠজনদের একজন ছিলেন। তার ডাক নাম ছিল ‘পুতিনস শেফ’। দেশের প্রয়োজনের সময় চাওয়া মাত্রই প্রিগোঝিনের সেবা পেয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তবে গত জুনে প্রিগোজিনের নেতৃত্বে কয়েক হাজার ওয়াগনার যোদ্ধা বিদ্রোহ করলে ওই সম্পর্কে গুরুতর ফাটল ধরে। শুধু তাই নয়, ভাগনার গ্রুপ প্রধানের ওই বিদ্রোহকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন পুতিন।
শুধু বিদ্রোহ নয়, সৈন্যদের নিয়ে তিনি মস্কো অভিমুখে যাত্রা করেন। পথে একের পর এক শহর দখলে যায় ভাগনার গ্রুপের। তবে পরদিনই পুতিনের বন্ধু হিসেবে পরিচিত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। ভাগনার গ্রুপ ফিরে যায় নিজেদের আস্তানায়। পরে লুকাশেঙ্কোর পরামর্শে ভাগনার গ্রুপ প্রধান ও তার সৈন্যরা বেলারুশে আশ্রয় নেয়।
ওই বিদ্রোহের পরই প্রিগোজিনের সুদিন যে শেষ হয়ে গেছে, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, ভাগনার গ্রুপ প্রধানের বিদ্রোহ মোটেই পছন্দ করেননি পুতিন। বহু বছর ধরে পুতিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন প্রিগোজিন। হঠাৎ করে বিদ্রোহ করে বসা অনেক বাড়াবাড়িই হয়ে গিয়েছিল। পুতিনের জন্য এই অপমান হজম করে যাওয়া কঠিন ছিল। বিশ্লেষকদের ধারনা, গত জুনে ওই বিদ্রোহের মাধ্যমে ভাগনারের প্রধান হয়ত নিজের নামে বিশেষ এক মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে ফেলেছিলেন।
এদিকে, গত বুধবার বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীই গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে ভাগনার গ্রুপের টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোনের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। তবে ওই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে অংশ নিয়েছে প্রিগোজিনের নেতৃত্বাধীন ভাগনার বাহিনী। পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুতে লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে তারা। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই অস্ত্র সরবরাহে ঘাটতির অভিযোগ তুলে রুশ সামরিক নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন প্রিগোজিন। এ নিয়ে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সামরিক প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে বাখমুত দখল করে তার দায়িত্ব রুশ সৈন্যদের হাতে ন্যস্ত করে ভাগনার গ্রুপ প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন।