ইউক্রেন যুদ্ধ: ৩ মাসে ভয়াবহ খাদ্য সংকট বিশ্বজুড়ে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২৪, ২০২২, ০৯:৪৪ পিএম

ইউক্রেন যুদ্ধ: ৩ মাসে ভয়াবহ খাদ্য সংকট বিশ্বজুড়ে

তিন মাস হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে দেশটির উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকে একযোগে হামলা চালায় রুশ সেনারা।

হামলায় এখন পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৬০ লাখের বেশি মানুষ। ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা। এমনকি পরিবেশ-প্রতিবেশেরও ক্ষতি হয়েছে অনেক। 

এ সংক্রান্ত ভিডিও দেখুন এখানে:

https://www.facebook.com/thereportdotlive/videos/709861946802410

রশিয়ার মতো শক্তিশালী একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ ভালই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা। ইউক্রেনকে ৩২২ মিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা ঘোষণা দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। এছাড়া আরও ৮শ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, যুদ্ধে এখন অব্দি অন্তত ৩ হাজার ৩৮১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৩,৬৮০ জন। সংস্থাটির পর্যবেক্ষক দল জানিয়েছে নির্বিচারে বিষ্ফোরক অস্ত্রের ব্যপক ব্যবহারের ফলেই মূলত হতাহতের শিকার হয়েছেন এত পরিমাণ বেসামরিক নাগরিক।

এখন পর্যন্ত রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ১৭৪টি যুদ্ধবিমান, ১২৫টি হেলিকপ্টার, ৯৭৭টি অন্যান্য আকাশযান, ৩১৭টি বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ৩ হাজার ১৯৮টি ট্যাংক ও অন্যান্য যুদ্ধযান, ৪০৮টি রকেট লঞ্চার ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের বিমান হামলায় কৃষ্ঞসাগরে ডুবে গেছে রুশ প্রতাপের প্রতীক মস্কোভা মিসাইল ক্রুজার।

এদিকে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তরুণ রুশ সার্জেন্ট ভাদিম শিশিম্যারিনকে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ইউক্রেনের একটি আদালত। কিয়েভ, মারিউপোল, খারকিভ, নিপ্রো, ডনবাস, লাভিভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের মোট ৩১৫টি স্থাপনকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা।

তবে, আধিপত্য বিস্তার বা সীমানা বিরোধের এই সংঘাতের প্রভাব শুধুই রাশিয়া-ইউক্রেন এবং তাদের মিত্রদের মধ্যেই সীমিত থাকেনি। যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়েছে পৃথিবীর প্রতিটি কোনায়। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা, যুদ্ধকালীন স্থবিরতা এসব কারণে পণ্য মূল্য বেড়ে গেছে কয়েক গুন। মহামারি কবলিত পৃথিবীজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। মুখ থুবড়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কার মতো গতিশীল অর্থনীতির দেশ। দুর্ভিক্ষ কড়া নাড়ছে অনেক দেশে।

এ সংক্রান্ত আরও ভিডিও দেখুন এখানে:

https://www.facebook.com/watch/?v=816308572631951

দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ইরানে। মন্দার কারণে, গম ভর্তুকি বন্ধ করেছে দেশটি। প্রায় ২০০ বছর ধরে দেওয়া এই সরকারি ভর্তুকি প্রত্যাহার হওয়ার কারণে ব্যপকহারে দাম বেড়েছে খাদ্য পণ্যের।

আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইএফপিআরআই এর তথ্য অনুসারে খাদ্য ঘাটতির কারণে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩টি দেশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী এই খাদ্য সংকট কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতিরেস।

আঁচ লেগেছে বাংলাদেশেও। টান পড়েছে রিজার্ভে। চাপ কমাতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মোট গম চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ উৎপাদিত হয় দেশে। বাকি ৯০ ভাগ আমদানি করতে হয়। গত বছর দেশের মোট আমদানির ৬০ শতাংশ কেনা হয় ভারত থেকে। আর সেই ভারতই সম্প্রতি বন্ধ ঘোষণা করেছে গম রপ্তানি। অন্যদিকে, ইউক্রেন থেকে যারা গম ক্রয় করে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে তিন নম্বরে। আপাতত যুদ্ধের কারণে কোন পণ্যই রপ্তানি করতে পারছে না ইউক্রেন।

রাশিয়ার দাবি বিদ্রোহ দমনে বিশেষ এই সেনা অভিযান পরিচালনা করছে রুশ সেনারা। প্রতিরোধ ইউক্রেনের। তবে, তিন মাসেই যেভাবে সংকট ছড়িয়েছে গোটা দুনিয়ায় তাতে সামনের দিনে আবারও ক্ষুধা, খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব।

Link copied!