চলতি বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত ১,৪৩২

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম

চলতি বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায়  শ্রমিক নিহত ১,৪৩২

ছবি: সংগৃহীত

বেসরকারি সংস্থার জরিপ প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে কর্মস্থল সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় মৃত্যু গত বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। 

বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশন শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন ওশি ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এসএম মোর্শেদ ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই কারণে গত বছর মারা যান ৯৬৭ জন। সেই হিসেবে এ বছর ৪৮ শতাংশ বেশি মানুষ কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেলেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ৫০২ জন, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। গত বছর গুরুতর আহত হন ২২৮ জন।

ওশি বলছে, এ বছর যারা কর্মক্ষেত্রে মারা গেলেন, তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ১০৩ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী। আর ৩২৯ জন প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৩৭ জন পরিবহন খাতের, ২২০ জন দিনমজুর, ১৪৯ জন নির্মাণকর্মী, ১৪৬ জন কৃষি খাতের ও ৯৪ জন উৎপাদন খাতের কর্মী।

ওশি সংবাদপত্র, অনলাইন ও টেলিভিশনে প্রকাশিত প্রতিবেদন, সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের স্পট রিপোর্ট, ট্রেড ইউনিয়ন ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

ওশির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে কমপক্ষে ৯ হাজার ২৬২ জন নিহত হন।

সংগঠনটি বলছে, শ্রম আইন, শ্রম বিধিমালা ও পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগের অভাব, প্রশিক্ষণবিহীন গাড়িচালক নিয়োগ, অপর্যাপ্ত শ্রম ও বয়লার পরিদর্শন ব্যবস্থা, সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহারে অনীহা ও গৃহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণের কারণে কর্মস্থলে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও হতাহতের ঘটনা বাড়ছে।

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত হতাহত কমাতে ওশি ১০টি সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলো হচ্ছে-

১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এ উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা।

২. পোশাক খাতের মতো অন্যান্য সেক্টরেও শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেইফটি কমিটি গঠন করা।

৩. কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন দশ লক্ষ টাকা এবং আহত শ্রমিককে পাচঁ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা। এছাড়া আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভূক্ত করা।

৪. শিল্প খাতের সকল সেক্টরে বিভিন্ন শিল্প, ব্যবসা ও পেশা ইউনিটে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা।

৫. সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডাটাবেইজ তৈরি করা।

৬. কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কীমে অর্ন্তভুক্ত করা এবং তাদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ হতে প্রদান করা।

৭. শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করা।

৮. কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা।

৯. শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরপত্তা নীতিমালা, ২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা।

১০. শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো।

 

Link copied!