এপ্রিল ১৫, ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে পর্যটন কেন্দ্র মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় পর্যটকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে ফেনীর সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তসলিম হুসাইনের বিরুদ্ধে। এসব পর্যটকের মধ্যে একজন কনস্টেবলও রয়েছেন।
গত শুক্রবার ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মুছাপুর ক্লোজার সড়কে মারধরের এই ঘটনা ঘটে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকালে ওই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমে এসেছে। তাতে দেখা যায়, সহকারী পুলিশ সুপার তসলিম হুসাইন হাতে একটি লাঠি নিয়ে দুই-তিনজন ব্যক্তিকে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। একপর্যায়ে তসলিম হুসাইনের সঙ্গে আরও কয়েকজন শামিল হয়ে ওই পর্যটকদের রাস্তায় ফেলে লাথি-ঘুষি মারছেন।
মারধরের ঘটনায় আহতরা হলেন নোয়াখালীর কবিরহাটের সুন্দলপুর ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আলী আজগর (৩৬) ও তার ভাই পুলিশ কনস্টেবল ওমর ফারুক (৩১) ও আজগরের স্ত্রীসহ (২৭) আরও বেশ কয়েকজন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আলী আজগর অভিযোগ করে বলেন, ‘ঈদে স্ত্রী, দুই সন্তান, ভাই ওমর ফারুক ও কয়েকজন বন্ধু নিয়ে মুছাপুর ক্লোজারে ঘুরতে যান আজগর। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘোরাঘুরি শেষে নিজের এলাকায় মোটরসাইকেলযোগে ফিরছিলেন তিনি। ওই মোটরসাইকেলে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান ছিল। কিছু পথ আসার পর বিপরীত দিক থেকে একটি পুলিশের গাড়ি আসে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সড়কটির দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে একজন (সহকারী পুলিশ সুপার তসলিম হুসাইন) একটি লাঠি নিয়ে নেমে আসেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমেই লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। একই সময় আমি (আজগর) উনাকে গালাগালি করতে নিষেধ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে কলার ধরে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন। আমাকে বাঁচাতে আমার স্ত্রী ও পুলিশ কনেস্টবল ভাই ওমর ফারুক এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে তাদের গাড়িতে থাকা আরও পাঁচ-ছয়জন একত্রিত হয়ে আমাদের সবাইকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন। এতে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয় এবং আমার ভাইয়ের হাত মচকে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। আমরা কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। সেখানে একদিন চিকিৎসা শেষে আমরা বাড়িতে ফিরে যাই। একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার সাধারণ মানুষের প্রতি এমন নির্মমতার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি আমরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেবো।’
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন সহকারী পুলিশ সুপার তসলিম হুসাইন। একে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দাবি করে গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘ওইদিন আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমি মুছাপুর ঘুরতে যাই। সড়কের যানজট থাকায় আমি প্রথমে গাড়ি থেকে নেমে যাই যান চলাচল স্বাভাবিক করতে। কিন্তু এ সময় সড়কের উল্টো পাশে একটি মোটরসাইকেলে নিজের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আজগর। আমি এগিয়ে গিয়ে তাকে সরতে বললে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে আমার ভাইসহ অন্যরা নেমে আসে এবং আজগরের ভাই ফারুক আমাকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিলে আমরা কথা বলি। এ সময় তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে আজগর আমার ভাইকে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে শুরু করলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে আমি ও ওমর ফারুক এগিয়ে তাদের শান্ত করি। বিষয়টি তাদের সাথে বসে মীমাংসা করা হয়েছে।’
ফেনী পুলিশ সুপার (এসপি) জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাকে লিখিত অভিযোগ কেউ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে এবং দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের জানুয়ারিতে সোনাগাজী সার্কেলে যোগদান করেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তসলিম হুসাইন। ফরিদপুরে তার পৈর্তৃক নিবাস।