ভাবুন তো, আপনি কাজ করছেন এক দেশে আর বাস করছেন আরেক দেশে। ব্যাপারটা কি রোমাঞ্চকর না? এই কাজটিই যারা করে থাকেন তাদের বলা হয় ডিজিটাল নোম্যাড।
ডিজিটাল নোম্যাড টার্মটির উৎপত্তি ১৯৯৭ সালে। সুজিও মাকিমোতো ও ডেভিড ম্যানারস- এর দ্য ডিজিটাল নোম্যাড বইটিতে প্রথমবার এই শব্দটির ব্যবহার। উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে যখন ইন্টারনেটেই পুরো দুনিয়া তখন এই ডিজিটাল নোম্যাড জীবন ধারণার বিষয়টিও পাচ্ছে বেশ জনপ্রিয়তা। কেবল ইন্টারনেট ও গ্যাজেট থাকলেই ডিজিটাল নোম্যাড হয়ে আপনিও ভ্রমণ ও জীবিকা একই সঙ্গে চালিয়ে নিতে পারেন।
একটি জরিপে দেখা যায় তরুণ প্রজন্ম, যাদের কাজগুলো ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই করে ফেলা যায় তারা এই ডিজিটাল নোম্যাড লাইফস্টাইল বেশি পছন্দ করেন। ডিজিটাল নোম্যাডরা আয়ও করছেন অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়াও তাদের কাজে বৈচিত্র্যও আসছে, যে কারণে তাদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে তুলনামূলকভাবে।
দেশের অর্থনীতি ও পর্যটনকে চাঙা করতে অনেক দেশই এখন ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা সুবিধা দিচ্ছে। মূলত সৃজনশীল ও কর্মদক্ষ মানুষরাই জীবনে ও কাজে বৈচিত্র্য আনার জন্য ডিজিটাল নোম্যাড লাইফ বেছে নিচ্ছেন। এ কারণে অনেক দেশ ডিজিটাল নোম্যাডদের দক্ষতা কাজে লাগাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ঘোষণার মাধ্যমে তাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
ডিজিটাল নোম্যাডরা বেশকিছু সময়ের জন্য একটি অঞ্চল থাকার জন্য বেছে নেয় যেখানে তারা স্বল্প খরচে ভালো বাসস্থান ও খাবার এবং অবশ্যই ভালো মানের ইন্টারনেট সুবিধা পায়।
চলুন কিছু দেশের কথা জেনে নেয়া যাক যেখানে ডিজিটাল নোম্যাড হয়ে বাস করা সুযোগ পাবেন-
১. ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়াতে ডিজিটাল নোম্যাড ভিসায় পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকা যাবে। ইন্দোনেশিয়ার বালি ডিজিটাল নোম্যাডদের কাছে বেশ প্রিয় একটি জায়গা।
২. জার্মানি: জার্মানিতে ডিজিটাল নোম্যাড হিসেবে এক বছরের মতো থাকার সুযোগ আছে।
৩. আইসল্যান্ড: ২০২০ সালে অক্টোবর থেকে আইসল্যান্ড ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা দিচ্ছে।
৪. নরওয়ে: ডিজিটাল নোম্যাডস হিসেবে সারাজীবন থেকে যেতে পারবেন নরওয়েতে।
৫. চেক রিপাবলিক: চেক রিপাবলিক এক বছরের ভিসা দিয়ে থাকে। তবে কমপক্ষে তিন মাস সেখানে অবস্থান করবেন এই শর্তে।
৬. গ্রিস: ডিজিটাল নোম্যাড ভিসায় দুই বছর গ্রিসে থাকতে পারবেন। তবে আপনাকে আপনার কর্মস্থলের প্রমাণ জমা দিতে হবে।
৭. পর্তুগাল: পর্তুগালের মাদেইরা দ্বীপের পন্টা দু সল ডিজিটাল নোম্যাডদের গ্রাম নামে পরিচিত। প্রায় ২০০ জনের মতো ডিজিটাল নোম্যাড বাস করেন।
৮. দক্ষিণ কোরিয়া: চলতি বছর থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ডিজিটাল নোম্যাড ভিসার ব্যবস্থা করেছে। ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা দিয়ে ২ বছর থাকতে পারবেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। পরবর্তীতে আরও ১ বছর বাড়ানোরও সুযোগ দিচ্ছে দেশটি।
এছাড়াও থাইল্যান্ড, গ্রিস, মেক্সিকো, স্পেন, ইতালিসহ আরও অনেক দেশে ডিজিটাল নোম্যাড হিসেবে অনেক তরুণরা বসবাস করছেন।
ডিজিটাল নোম্যাড হিসেবে জীবন উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে অনেক। তবে এর জন্য উপার্জিত অর্থের পরিমাণও হতে হয় অনেক বেশি। যদি আপনার জবটি ডিজিটালি করা সম্ভব হয় এবং দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থান তৈরি করতে পারেন তাহলে ডিজিটাল নোম্যাড হয়ে যেতে পারবেন আপনিও!