ভিডিও বানিয়ে ‘ইউটিউবের রাজা’ মিঠুন, প্রতি মাসে আয় কয়েক লাখ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৩, ২০২২, ০৪:৫০ পিএম

ভিডিও বানিয়ে ‘ইউটিউবের রাজা’ মিঠুন, প্রতি মাসে আয় কয়েক লাখ

মে মাসের তীব্র গরমের এক  দুপুরে নওগাঁর প্রত্যন্ত গ্রাম ঈশ্বরদেবতায় এক লোক হাতে কাঁঠাল নিয়ে বসে আছেন বরই গাছের নীচে।

তার পাশে একজন নারী বিক্রেতা ছিলেন যিনি একটি ভ্যানে দোকান সাজিয়ে বসেছেন। ভ্যানের ওপর কয়েকটি বোতলে ছিল পানিতে মেশানো আবির। এই আবির হোলিতে ব্যবহার করা হয়। ওই নারী হাঁক দিয়ে ক্রেতাদের মনোযোগ আকষর্ণের চেষ্টা করছিলেন।

কিন্তু হঠাৎ  কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে ওই নারীর দিকে কাঁঠাল ছুঁড়ে মারলেন। এতে রঙের বোতলগুলো পড়ে গেল, রাস্তায় ছড়িয়ে গেল রঙ। নারী অত্যন্ত ক্রুব্ধ হলেন। তাঁর চিৎকারে আশেপাশের কিছু লোক জড়ো হলো।

একটি ফানি ভিডিওর শুরুটা এভাবেই হলো।

ইউটিউবে এমন অসংখ্য ভিডিও তৈরি করে বাজিমাত করেছেন নওগাঁর প্রত্যন্ত এলাকার মতিউর রহমান মিঠুন (৩২)। তার ভিডিওতে আলাদা কিছু শব্দ থাকলেও কোনো কথা নেই। অঙ্গভঙ্গি দেখেই মানুষ মজা পায়।



কোনো মহা আয়োজন নেই, বিষয়গুলো খুবই সাদামাটা। গ্রামের বখাটে তরুণ-তরুণীরা যা যা করেন, তেমনই কর্মকাণ্ড। অথচ এসব কর্মকাণ্ড দেখিয়েই ইউটিউব চ্যানেলে এক কোটির বেশি গ্রাহক জুটিয়েছেন তিনি। চ্যানেল এখন ব্যক্তিপর্যায়ে দেশে সবচেয়ে বড় ইউটিউব চ্যানেল।

খুব সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা মিঠুনের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে গেছে। ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। তাঁর অধীনে ৭০ জন কাজ করেন। কেউ অভিনেতা,  কেউ নিরাপত্তা প্রহরী, আবার কেউ টেকনিক্যাল বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। তিনি প্রত্যেককে মাসিক বেতন হিসাবে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেন।

মিঠুন বলেন, “আমি যাদের নিয়োগ দিয়েছি তারা বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালাতে পারেন। এতে তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। মাদকাসক্ত বা অন্য খারাপ পথে তারা যাচ্ছেন না।”

শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ মিঠুনের বানানো ভিডিওগুলো দেখে। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে।



মিঠুন বলেন, “আমার ভিডিওগুলো এক দিনে কয়েক মিলিয়ন মানুষ দেখে।  যদি কোনো ভিডিও দিনে এক মিলিয়নের কম ভিউ হয়, তাহলে তাহলে আমি এটাকে কম পারফরমিং কন্টেন্ট হিসেবে বিবেচনা করি।”

পড়াশুনা শেষ করে মিঠুন চাকরির জন্য গিয়েছিলেন ওষুধ কোম্পানিতে। চাকরি না হয়ে হতাশ মনে গ্রামে ফিরে আসেন। ২০১৭ সালে স্যামস্যাং জে-২ মোবাইল ফোন কেনার সময় ২ জিবি মেগাবাইট ফ্রি দেওয়া হয়। সেই এমবি দিয়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ফানি ভিডিও দেখেন মিঠুন। ভিডিওগুলো দেখে বন্ধু মিজানুর রহমানে সঙ্গে পরামর্শ করে ভিডিও তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে শুরু হয় ইউটিউবের জন্য ভিডিও বানানো।

শুরুতে শুধু ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও তৈরি করতেন। পরে দেখলেন, তার তৈরিকৃত ভিডিও বিভিন্ন ফেসবুক পেজে আপলোড করে অন্যরা সেখান থেকে আয় করছে। এরপর তিনি ফেসবুকে পেজ খোলেন এবং সেখান থেকেও আয় করছেন।

এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ঈশ্বরদেবত্বর গ্রাম। যেখানে ইউটিউবে ভিডিও তৈরির জন্য নিজস্বভাবে মাটির দেয়াল ও খড়ের ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পৃথক দুটি বাড়ি। সামনে দেওয়া হয়েছে বেড়া। যেখানে বিভিন্ন রঙ করে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। চারকক্ষ বিশিষ্ট ইটের আধাপাকা বাড়িও তৈরি করা হয়েছে। ছোট পুকুর খনন করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার দুই পাশে থাকা গাছগুলো রঙ করা হয়েছে। অভিনেতারা যে যার মতো অঙ্গভঙ্গির অভিনয় করা নিয়ে ব্যস্ত।

মিঠুন বলেন, এক সময় ‘এসডি ফানি ভিডিও বিডি’ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে ইউটিউব থেকে ফানি ভিডিও বন্ধ করে দেয়। পরে আবারও চালু হয়। বর্তমানে ‘বিজি ফান টিভি’ ও ‘মাহা ফান টিভি’ এ দুটো ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল আছে। ‘বিজি ফান টিভি’ তে সাবস্ক্রাইব আছে প্রায় ১০ মিলিয়ন। প্রতি মাসে গড়ে পাঁচটি ভিডিও আপলোড করা হয়।

ফানি ভিডিও তৈরি করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইউটিউব চ্যানেলের স্বপ্ন দেখেন মিঠুন।

সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

Link copied!