৬৫ বছর পর পাওয়া গেল হারিয়ে যাওয়া ওয়ালেট

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৩, ২০২৪, ০৫:৫৭ পিএম

৬৫ বছর পর পাওয়া গেল হারিয়ে যাওয়া ওয়ালেট

ছবি: সংগৃহীত

১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে এক নারী তাঁর ওয়ালেট হারিয়ে ফেলেছিলেন। ৬৫ বছর পর খুঁজে পাওয়া গেছে সেটি। আশ্চর্য এ ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার আটলান্টা শহরে।

১৯৫৯ মডেলের একটি নতুন শেভ্রোলেট গাড়ি জেতার জন্য কেনা লটারির টিকিট, আগের জমানার ক্রেডিট কার্ড, সাদা-কালো পারিবারিক ছবি—এসবসহ ওয়ালেটটি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল প্লাজা থিয়েটারের একটি বাথরুমের দেয়ালের পেছনে। কয়েক দশক একে স্পর্শ করেনি কেউ। 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। 

প্রায় ৬৫ বছর পরে সংস্কারের সময় বাথরুমের একটি ভাঙা প্রাচীরের পেছনে নির্মাণশ্রমিকেরা লুকানো একটি জায়গার সন্ধান পান। ছোট্ট কুঠুরিটি একটি আলমারি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সেখানে ধুলোর পাহাড়ের নিচে বিবর্ণ একটি মানিব্যাগের খোঁজ মেলে। প্লাজা থিয়েটারের মালিক ক্রিস এসকোবার সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবে হোক মানিব্যাগ বা ওয়ালেটটি যে পরিবারের সম্পত্তি, তাদের ফিরিয়ে দেবেন।

এসকোবার সিএনএনকে বলেন, ‘এটি পুরোনো সময়ে ফিরে যাওয়ার একটি পথের মতো, তারপরে বুঝতে পারি এটি এমন একটি পরিবার থেকে নিখোঁজ হয়েছে, যারা এই এলাকায় ৬৫ বছর ধরে বাস করছে। ভাবলাম, যদি তাঁদের খুঁজে পাই, কী একটা অভাবনীয় বিষয় হবে।’

এসকোবার জানান, মানিব্যাগটি ইতিহাসে পূর্ণ। এটি তাকে এর মালিকের পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার জন্য ভালো একটি সূত্র দিয়েছিল।

ওয়ালেটের ভেতরের লাইসেন্স দেখে বোঝা যায় এটি ফ্লয় কালব্রেথ নামের এক নারীর। তবে এসকোবার গোড়াতেই একটি সমস্যায় পড়লেন। ওই সময় নারীদের বড় একটি অংশ স্বামীদের নাম ব্যবহার করতেন। 

তাই কালব্রেথের নাম অনুসন্ধান করে কয়েকটি ফল পেলেন। মানিব্যাগের মালিককে খুঁজে বের করার জন্য এসকোবার তাঁর স্ত্রী নিকোলেকে কাজে লাগালেন, যাঁকে তিনি আদর করে ‘ইন্টারনেট গোয়েন্দা’ বলে ডাকেন।

একপর্যায়ে নিকোলে ফ্লয়ের স্বামী রয় কালব্রেথের মৃত্যুর পর পত্রিকায় যে শোক সংবাদ ছাপা হয়, তা খুঁজে পান। সেই সূত্র থেকে আবার নানা তথ্য জোগাড় করে খুঁজতে খুঁজতে ‘কালব্রেথ কাপ’ নামের সেরিব্রাল পালসিতে (মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা বা ক্ষতির কারণে সৃষ্ট স্নায়বিক সমস্যা) আক্রান্তদের জন্য আয়োজিত একটি গলফ প্রতিযোগিতার ওয়েবসাইটের খোঁজ পান। প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে পরিবারটি। সেখান থেকেই সন্ধান মেলে কালব্রেথের মেয়ে থিয়া চেম্বারলিনের। 

এসকোবার আরও বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে অনুভব করছি যে এই ঐতিহাসিক স্থান দেখতে পারা এবং পরিচালনা করতে পারা একটি বড় বিষয়, কিন্তু আক্ষরিক অর্থে পরিবারকে তাদের ইতিহাস ফিরিয়ে দেওয়া একেবারে অন্যরকম এক ব্যাপার।’

ফ্লয় কালব্রেথ অবশ্য পৃথিবীর থেকে বিদায় নিয়েছেন বেশ আগেই। চেম্বারলিন বলেছিলেন যে তার মাকে বিখ্যাত অভিনেত্রী মির্না লয়ের মতো সুন্দরী এবং আরেক অভিনেত্রী জুন ক্লিভারের মতো ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে বর্ণনা করা হতো তরুণী বয়সে। তিনি জানান, ফ্লয় কালব্রেথ সামাজিক বিভিন্ন কাজেও জড়িত ছিলেন। সানডে স্কুলে পড়াতেন, গার্ডেন ক্লাবে জড়িত ছিলেন। এদিকে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্তদের সাহায্য করার মতো অলাভজনক কাজেও মন-প্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন।

চেম্বারলিন নিজের কিছু জিনিসও খুঁজে পান মানিব্যাগে। কয়েকটি বিমা কার্ড এবং চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্টের কাগজ। ৭১ বছর বয়স্ক চেম্বারলিনের বয়স তাঁর মা ওয়ালেটটি হারানোর সময় ছিল কেবল ছয়।

মানিব্যাগে পাওয়া যাওয়া ছোট ছোট অলংকারগুলো নিঃসন্দেহে তাঁর মায়ের, জানান চেম্বারলিন। তিনি কল্পনা করেন, ওই সময় কালব্রেথরা আশা করছিলেন যে তারা সেই ড্রতে শেভ্রোলেট গাড়িটি জিতবেন।

চেম্বারলিন বলেন, ‘এটি খুব হৃদয়স্পর্শী,  স্মৃতির বন্যায় ভেসে যাচ্ছিলাম। এটি তাঁকে আবার ফিরিয়ে এনেছিল আমার কাছে।’

কালব্রেথরা গত নভেম্বরে মানিব্যাগটি সংগ্রহ ও ফিরে পাওয়া উদ্‌যাপন করতে একত্রিত হয়েছিল।

 

Link copied!