অর্থনীতি সচল করতে গাধার উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াচ্ছে পাকিস্তান!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুন ১৪, ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম

অর্থনীতি সচল করতে গাধার উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াচ্ছে পাকিস্তান!

বহু বছর ধরে মানুষের জন্য সেবা দিয়ে আসা এক প্রাণি হলো গাধা। গাধারা মোটেও  গাধা নয়। গাধা কর্মঠ, বুদ্ধিমান এবং উপকারী প্রাণী। তারপরও মানুষ অপমান বা ভদ্র ভাষার গালি হিসেবে ‘গাধা’ শব্দটি ব্যবহার করে। বর্তমানে কোনো কোনো দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই গাধাই। এমন একটি দেশের নাম পাকিস্তান।

মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে নিরীহ প্রাণি গাধা। বিশেষ করে ভার বহনে গাধা হয়ে আছে আস্থার প্রতীক। বৈরি আবহাওয়া কিংবা কঠিন ভূখণ্ডেও গাধা টিকতে পারে সহজেই। পার্বত্যময় অঞ্চলের জনগণের অন্যতম নির্ভরতার যোগাযোগ মাধ্যম এই নিরীহ প্রাণিটি।

বিশ্ব সভ্যতার ঐতিহ্য গড়তেও গাধাদের ভূমিকা রয়েছে। কারণ, ভারি সব উপকরণ বহন করতে একমাত্র গাধাকেই ব্যবহার করা হয়েছে । ইতিহাস বোলছে, মিশরীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ উপকরণ সামগ্রী গাধার মাধ্যমেই বহন করা হয়েছিল।  শুধু তাই না, গ্রিসে সংকীর্ণ পথের ওপর কাজ করার জন্যও গাধাকে ব্যবহার করা হয়েছিল।

https://www.facebook.com/trinternational2023/videos/920323229254435

রোমান সেনাবাহিনী গাধাকে পণ্য বহনকারী প্রাণী হিসেবে ব্যবহার করতো। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের মরু অঞ্চল রাজস্থান ও জয়পুরে অন্যতম বাহন গাধা। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মালামাল নিয়ে এরা সহজে চলাফেরা করতে পারে।

গড়ে ৫০ থেকে ৫৪ বছর বাঁচা এই গাধা  ঘণ্টায় ৩১ মাইল যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উদ্দেশে গাধাকে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ বা বাষ্পশক্তি উদ্ভাবনের আগে সমাজের উন্নয়নে গাধা দ্বারা উৎপাদিত শক্তি ব্যবহার হতো নানা ক্ষেত্রে।

বর্তমানে ঝিমিয়ে হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকা সচল করতে অবারও এই প্রাণিটির উৎপাদন বাড়াতে জোর দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। আর তাই কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বেড়েই চলেছে গাধার সংখ্যা।

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়,২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে গাধার সংখ্যা হয়েছে ৫৮ লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৫৭ লাখ এবং তার আগের অর্থবছরে ৫৬ লাখ। প্রতিবেশি দেশ চীনে গাধা রপ্তানির উদ্দেশে পাকিস্তানের বিভিন্ন খামারে বেড়ে চলেছে গাধার সংখ্যা।

পাহাড়ের চাইতেও উঁচু, সাগরের চেয়েও গভীর, ইস্পাতের চাইতেও শক্তিশালী এবং মুধর চেয়েও মিষ্টি। পাকিস্তান ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এভাবেই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বর্ণনা করে থাকেন। কিন্তু এখন পাকিস্তানি গাধারাও দেশ দুটির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করছে। 

বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাধা জন্ম নেওয়া দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে পাকিস্তানের নাম। চীন রয়েছে তালিকার শীর্ষে। সম্প্রতি দেশের চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠতে পারছে না জনসংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম এই দেশটি। যে পরিমাণ গাধা দরকার, সে পরিমাণ গাধা দেশে উৎপাদনই হচ্ছে না।‌ ফলে বাধ্য হয়ে পাকিস্তান থেকে গাধা আমদানি করছে চীন।

২০১৯ সালে গাধার ব্যবহার সম্পর্কে দ্য গাডিয়ানের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গাধার‌ ত্বকের মধ্যে জিলেটিন থাকে যা ওষুধ তৈরি কাজে ব্যবহার করা হয়। চীনও একই উদ্দেশে গাধাকে ব্যবহার করে। গাধাকে হত্যা করে তার ত্বক শরীর‌ থেকে আলাদা করে সেই ত্বক ভালো করে ফুটিয়ে বাবের করা হয় ওষুধ তৈরি জিলেটিন‌।

পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২২ সালে পাকিস্তান থেকে গাধা ও কুকুর আমদানি করে আসছে চীন। এই দেশটির  এর আগে আফ্রিকার দেশ নাইজার ও বুর্কিনা ফাসো থেকে গাধা আমদানী করতো। তবে দেশ দুটি গাধা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে চীন।

বর্তমানে গাধা রপ্তানিতে জোর দিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। চীন ও অন্যান্য দেশে গাধা রপ্তানি বাড়াতে ‘উন্নত জাতের’ গাধা পালনের জন্য প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে খামার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরই মধ্যে পাঞ্জাব রাজ্যের ওকারা জেলায় ৩ হাজার একর জমি জুড়ে তৈরি ফার্মে গাধার উৎপাদন শুরু হয়েছে। চীনসহ অন্যান্য দেশে পাকিস্তানের গাধা রপ্তানি দেশটির অর্থনীতিতে বেশ সহায়তা করবে-এমনটাই মনে করছেন পাকিস্তানের বাজার বিশ্লেষকেরা।

Link copied!