ওদের মুখে হাসি ফোটালো হ্যালো পার্বতীপুর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ৫, ২০২১, ০৯:৫৮ পিএম

ওদের মুখে হাসি ফোটালো হ্যালো পার্বতীপুর

আসমাউল মুত্তাকিন: রাত ৯টা। প্রতিদিনের মতো সেদিনও রাতে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। চারদিকে কোলাহল শোনা যাচ্ছে। আর পথচারিরা যে যার মতো গন্তব্যে ছুটে চলেছেন। কেউবা নিজের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোথাও আলো, কোথাও অন্ধকার, কিন্তু মিটমিট করে আকাশে চাঁদ হাসছে। দেখা যাচ্ছে তারার মেলা।

কিন্তু কেউ অপেক্ষারত সেই মানুষটির খোঁজ নিচ্ছেন না। কেউ তার জন্য একমুঠো খাবারের কথা বলছেন না। বৃদ্ধার মতো আরও অনেককে দেখা যাচ্ছে, যারা অপেক্ষা করেছেন খাবারের জন্য।

ঘটনাস্থল দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন। প্রতিদিনের মতো সেই দিনেও পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসেছি। হঠাৎ চোখে পড়লো সেই বৃদ্ধকে। নেই তার ঠিকানা, নেই তার পরিবার পরিজন। কেউ বলতে পারছেন না সেই বৃদ্ধার নাম। পেট পুরে খেতেও পারেন না তিনি। প্রতিদিন একবার খাবার খান, অনাহারেও মাঝে মাঝে কাটাতে হয়।

এই দৃশ্য দেখতে দেখতে সেখানে উপস্থিত হলেন একদল তরুণ। হাতে তাদের খাবারের প্যাকেট। একটি নয়, দুইটি নয় অনেক খাবারের প্যাকেট। সেগুলো থেকে এক একটি করে তারা বিতরণ করছেন। বিতরণ করছেন ওই সব ব্যক্তিদের মধ্যে, যারা একটু আগে এখানে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

জানা গেলো, তারা প্রতিদিন এখানে আসেন। রেলস্টেশনে পড়ে থাকা অসহায় ব্যক্তি, পথশিশু এবং না খেয়ে থাকা ব্যক্তিদের খাবার বিতরণ করেন। তাদের এই কার্যক্রমটির বয়স প্রায় এক বছর।

করোনা পরিস্থিতিতেও তাদের শততম দিনে এভাবেই শহরে ঘুরে ঘুরে অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিলি করছেন তারা। তাদের একটি সংগঠন আছে। নাম ‘হ্যালো পার্বতীপুর’। এই সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের পকেট খরচের টাকা সাশ্রয়ের মাধ্যমে নিজেরাই পুঁজি তৈরি করেন। এই স্বল্প পুঁজি নিয়েই তারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। প্রতিদিন একবার আর্থিক অসংগতি থাকা মানুষের জন্য একবেলা সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা করার ক্ষুদ্র এই প্রয়াস শুরু হয়-‘হ্যালো পার্বতীপুর’-এর মাধ্যমে।

তারা নিজেরাই বাজার করে নিজেরাই রান্না করেন সুস্বাদু খাবার। তারপর নিয়ে যান তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। তাদের এই রান্না করা খাবার এখন পরিতৃপ্তি জোগাতে অনেকটাই সক্ষম। পার্বতীপুরে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা কম নয়। তবে স্বল্প পরিসরে হলেও শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব ছিন্নমূল মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে সংগঠনটি। আর অর্থের যোগানের পুরোটাই আসছে তাদের পকেট খরচ থেকে।

হ্যালো পার্বতীপুর এর প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল ইসলাম ইমু বলেন, করোনার কারণে গরিব-অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের খাবারের কষ্ট বেড়ে গেছে। এতে আমাদের এখানে ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আমাদের এই উদ্যোগ যেন কিছু মানুষকে হলেও মাসে অন্তত একদিন ভালো খাবার দিতে পারে। গত পাঁচ মাস ধরে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর পুরো টাকা আসে আমাদের পকেট খরচ থেকে। প্রতিমাসের পকেট খরচ থেকে কিছু অংশ আমরা সঞ্চয় করি। পরের মাসের শুরুতে সে টাকাগুলো একত্র করা হয়। সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা এসব খাবার বিতরণ করেন। খাবার পেয়ে ছিন্নমূল মানুষ খুবই খুশি।

হ্যালো পার্বতীপুরের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার বিপ্লব বলেন, সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিরা যে যার মতো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আমরাও চেষ্টা করছি, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আমরা সংগঠনের এই সদস্যরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে চেষ্টা করছি প্রতিদিন রান্না করে খাবার বিতরণের। আমাদের ইচ্ছা আছে এই ক্রান্তিকাল কেটে না যাওয়া পর্যন্ত এভাবে এসব মানুষের পাশে দাঁড়াবার।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

Link copied!