ক্লাইমেক্স, সাসপেন্স আর টান টান উত্তেজনা শুধু হিন্দি বা তামিল ছবিতেই দেখা যায় না। অনেক সময় বাস্তব জীবনেও দেখা দেখা যায় এরকম অনেক ঘটনা যা বলিউড বা তামিল চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। এমনই ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ভারতের উত্তর প্রদেশেশের এক ঘাতক। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
লিলু ত্যাগী। এক অদ্ভূত হত্যাকারী। শুধুমাত্র পাঁচ কোটি টাকার সম্পত্তির জন্য বিগত ২০ বছর ধরে নিজের পরিবারের মানুষদের লাগাতার খুন করে আসছে উত্তর প্রদেশের এই ব্যক্তি। ৫ জনকে খুনের পর অবশেষে তার কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়েছে। মুরাদাবাদের ৪৮ বছর বয়সি লিলু ত্যাগী নামের ওই ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায় পরবর্তী খুনের পরিকল্পনায় কে ছিলেন?
উত্তর প্রদেশ পুলিশের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, ৪৮ বছরের লিলু চাষাবাদ করেই আয় করত। ওরা তিন ভাই-সুধীর, ব্রিজেশ আর লিলু। ১৬ বিঘা জমির জন্যে ২০০১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত পরিবারের ৫ জনকে খুন করেছে লিলু। সম্পত্তির কোনও ভাগীদারই রাখতে চায়নি লিলু, যার কারণেই এই আচরণ। ঘটনাটি পুলিসের নজরে আসে তখনই যখন তার ভাই নিজের ছেলের নিখোঁজ হওয়ার জন্যে ডায়রি করান থানায়। লিলুর এই অপরাধের সঙ্গী ছিল উত্তর প্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত পুলিস ইন্সপেক্টর সুরেন্দ্র ত্যাগী এবং তার গাড়ির চালক রাহুল।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, ২০০১ সালে প্রথম খুন করে লিলু। লিলুর তখন বয়স ২৮। সুভাষ নামের একজনকে ১ লাখ টাকার সুপারি দেয় দাদা সুধীরকে খুন করার জন্যে। ওই সুপারি কিলার বর্তমানে মৃত। ভাই সুধীরকে খুন করে দেহ কালি নদীতে ভাসিয়ে দেয় লিলু। এটা ছিল প্রথম হত্যা।
এরপর নিজের মৃত ভাইয়ের বউকেই বিয়ে করে লিলু, যার ঘরে দুই মেয়ে পায়েল এবং পারুল। বিয়ের পর ২০০৩ সালে লিলুর ঘরে এক ছেলে হয়, নাম শঙ্কি। সাল ২০০৬, স্ত্রী অনিতা বাপের বাড়ি গেছেন। সেই সুযোগ হাতছাড়া করেনি লিলু। স্ত্রীর আগের পক্ষের মেয়ে ৮ বছরের পায়েলের খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে হত্যা করে। পরিবারকে জানায় বিষাক্ত পোকার কামড়ে মৃত্যু হয়েছে মেয়ের। যা শুনে পরিবার পুলিসের দ্বারস্থ আর হয়নি।
এরপর ২০০৯, ১৫ বছরের মেয়ে পারুলকে একইভাবে হত্যা করে লিলু এবং তার দেহ গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত একটি খালে ফেলে দেয়। এইবার বাড়িতে সে বলে, মেয়ে কোনও ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে। পুলিসকে জানালে পরিবারের সম্মানহানী হবে তাই পুলিসে কিছু জানানোর দরকার নেই বলে পরামর্শ দেয় খুনি নিজেই। মেয়েদের খুন সম্পর্কে লিলু পুলিসকে জেরায় বলে, ‘মেয়েদের বিয়ে দিলে অনেক খরচ হতো। এই কারণেই তাদের সরিয়ে দেওয়া।’
২০১৩ সালের ঘটনা। দাদা ব্রিজেশের ছেলে ১৬ বছরের নিশুকে মেরে হিন্দন নদীতে ফেলে দেয়। এইবার বাড়িতে সে বলে, নিশি মাদকাসক্ত ছিল। পুলিসে জানালে সম্মান থাকবে না বলে পরামর্শ দিলে সেইবারও পরিবার পুলিসে যায়নি।
২০২১ সালের আগস্ট মাস। লিলুৃ ত্যাগী খুন করে দাদার অপর সন্তান রিশুকে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিস সুরেন্দ্র ত্যাগীর সহযোগিতায় প্রফেশনাল কিলার বিক্রান্তকে দিয়ে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে লিলু খুন করায় নিজের ভাইপোকে। রিশুর নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা ব্রিজেশ পুলিসের দ্বারস্থ হয়।
এরপরই যখন পুলিস তদন্ত শুরু হয়, একে একে ফাঁস হয় আসল তথ্য। পুলিসের জেরায় লিলু জানায়, ‘পরিবারের কেউ থাকলেই সম্পত্তির ভাগ নেবে। আমি সব আমার ছেলে শঙ্কিকে দিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।’ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৬৪, ২০১ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তবে পুলিসের হাতে ধরা পড়ে একটুও ভেঙে পড়েনি খুনি লিলু। পুলিসকে সে বলেছে, ‘আমি রাজার মতো এসছি, আর রাজায় মতোই যাব।’