সিলেটের জাফলংয়ে পর্যটকদের উপরে হামলার ঘটনায় আলোচনায় এসেছে দেশের পর্যটকদের নিরাপত্তার ইস্যুটি। শুধু নিরাপত্তা নয়, দেশে ভ্রমণের জন্য যে টাকা খরচ হয়, সেই তুলনায় সেবা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ পর্যটকদের। দেশের পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও নানা কারণে অনেকেই দেশের বাইরে ভ্রমণে আগ্রহী। মিনহাজুল ইসলাম নামে একজন পর্যটক বলেন, দেশের মধ্যে ভ্রমণ করতে যে খরচ, তার থেকে একটু বেশি খরচ করলেই দেশের বাইরে ভ্রমণ করা যায়। তাই অনেকেই দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী। এছাড়া দেশের মধ্যে ভ্রমণ খরচও দিনদিন ব্যাপকহারে বাড়ছে। এছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টিই ইদানিং সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না।
দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে আলাপকালে ইসমাত সৃজনী নামের একজন পর্যটক বলেন, বাংলাদেশের ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর খরচ অনেকটা অর্গানাইজডলি এক্সপেনসিভ (পরিকল্পিতভাবে ব্যয়বহুল)। ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে পৌছাতে যে যানবাহনগুলোতে যাত্রীরা চড়েন সেগুলোর ভাড়া মাত্রাতিরিক্ত বেশি; থাকার আবাসিক হোটেল, খাবারের হোটেল-সবখানেই বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে পর্যটকদের। আর যদি কোন সাধারণ ছুটির উপলক্ষ হয়, তবে সেগুলোর ভাড়া আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এবার ঈদের ছুটিতে কাশ্মীর ভ্রমণে যায় বাপ্পি-অনন্যা দম্পতি। বাংলাদেশে এত ঘুরার জায়গা থাকতে দেশের বাইরে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, দেশের স্পট গুলো ব্যয়বহুল। সেই তুলনায় সার্ভিস পাওয়া যায়না। অন্যদিকে যারা সার্ভিসের দায়িত্বে থাকে তাদের থেকে ভাল ব্যবহার আশা করা যায় না। দিন শেষে বাজে একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। অথচ এই একই টাকায় বাইরের দেশে ভ্রমণ করা যায়। যেখানে কোন কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না।
দেশে যেমন বিনোদন স্পটের অভাব নাই ঠিক তেমন ভ্রমণ পিপাসুদের অভাব নাই। কিন্তু প্রায় সময়ই আমরা গণমাধ্যমগুলোতে দেখি পর্যটকরা স্থানীয় লোকজন, দায়িত্বরতদের কাছ থেকে হেনস্থার শিকার হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার ইস্যু টেনে কামরুন নাহার নামের একজন পর্যটক বলেন, খুব ভালো লাগে ঘুরতে। ছুটি পেলেই ঘুরতে যাই। তবে নিরাপত্তার বিষয় মাথায় আসলে এখন আর যেতে ইচ্ছে করে না। আমাদের পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন তাদের উচিত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার। ঠিক একই কথা বলেন আরেকজন পর্যটক মো জুয়েল আলী। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দে ঘুরতে চাই। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানাই।
বিভিন্ন ট্রাভেল গ্রুপের আয়োজকরা জানান, বিভিন্ন ইস্যুতে দেশের ভেতরে ঘুরার পর্যটক কমে যাচ্ছে। বাহিরমুখী পর্যটকদের সংখ্যা এখন বেশি।
গত দু'বছর স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা ভারতে যেতে পারেনি। তবে চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ-ভারত যাত্রী যাতায়াতের জন্য স্থলবন্দর খুলে দেওয়ার পর ভিসা আবেদন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। প্রতি কর্মদিবসে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্রগুলোতে সাহরির পর থেকে আবেদনকারীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, বিদেশ ভ্রমণে বাংলাদেশিদের পছন্দের শীর্ষে আছে ভারত, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া। এরপরই আছে থাইল্যান্ড।
জরিপের তথ্য বলছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২৯ লাখ ২১ হাজার পর্যটক বিদেশে ঘুরতে যায়। ভ্রমণে গিয়ে একেকজন পর্যটক বিদেশে গড়ে ছয় দিন অবস্থান করে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পর্যটক গেছে ভারত ভ্রমণে। এটা মোট পর্যটনের প্রায় ৬০ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে বলা হয়েছে, বিদেশে ১২.৭৭ শতাংশ ভ্রমণ করছে চিত্তবিনোদন ও সময় কাটানোর জন্য। ভ্রমণ পিপাসুরা জানান, বিভিন্ন কারণে বিদেশ ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা। জিডিপিতে এখন পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকার সমান। সম্ভাবনাময় এ খাতের বিকাশে সরকারের পর্যটন সংশ্লিষ্টদের আরও একটু দায়িত্ববান হওয়ার আহবান সচেতন পর্যটকদের।