চলমান আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে দলের ব্যর্থতার দায়ভার নিজ কাঁধে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এবারের বিশ্বকাপে প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে টাইগাররা।
প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল টাইগাররা। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি থেকে সাত ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পায় টাইগাররা।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয়ের পর হারের বৃত্তে আটকে যায় বাংলাদেশ। এতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনাও এখন ফিকে হয়ে গেছে টাইগারদের।
আজ দিল্লিতে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘গ্রুপের সবার মত আমিও এই ব্যর্থতার দায় নিচ্ছি কারণ আমরা ভক্তদের হতাশ করেছি এবং নিজেদেরকেও আমরা হতাশ করেছি। আমরা নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারিনি। কিন্তু প্রথম ম্যাচ থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই পরিবর্তন হয়নি।’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্য আগামীকাল দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলংকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের কোচ হিসেবে প্রথম দফায় সফল হলেও, দ্বিতীয় মেয়াদের মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখছেন ২০১৫ সালে দলকে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে নেয়া হাথুরুসিংহে।
হাথুরু জানান, অনেক বেশি প্রত্যাশার কারনেই নিজেদের হতাশ করেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, “শুধুমাত্র আমাদের কানের মধ্যে যা চলছে সেটাই পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের দক্ষতা কোথাও যায়নি। এজন্য আমি মনে করি আমরা উচ্চ প্রত্যাশা করে নিজেরা নুয়ে পড়েছি।
এই একটা বিষয় নিয়েই আমরা ভাবতে পারি। কারণ আপনি ঠিক বলেছেন, আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারিনি বা আমরা যাতে পারদর্শী ছিলাম বা বিশ্বকাপে আসার আগে আমরা যেভাবে খেলেছি। এর মানে হলো, আমাদের সবাইকে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে এবং দেখতে হবে কি ভুল হয়েছে।”
একই সাথে অনেক খেলোয়াড়ের ফর্ম হারানোটাও দলের হতাশাজনক পারফরমেন্সের মূল কারণ ছিল বলে জানান হাথুরুসিংহে।
বড় প্রত্যাশা থাকায় বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, তানজিদ হাসান তামিমরা চাপ নিতে পারবেনা বলেই ধারনা করা হচ্ছিলো। এবং তাই হয়েছেও ।
হাথুরুসিংহে বলেন, ‘আমি দ্বিধা দ্বন্দে আছি যে, হ্যাঁ নাকি না বলবো। সত্যি বলতে, আমি জানি না। একমাত্র যে জিনিসটি আপনি ভাবতে পারেন, তা হচ্ছে সবার উচ্চাকাঙ্খা। কারন খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সবাই বড় আসরে পারফরমেন্স দেখাতে চাই। এটাকেই বলে আকাঙ্খা। এটাকে চাপ বলা যেতে পারে, আবার বলা যায় এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে ভালো করার চেষ্টা করবেন।’
গত বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ জিতলেও, ঐ আসরকে ব্যর্থ হিসেবে মনে করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তৎকালীন প্রধান কোচ স্টিভ রোডসকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিলো।
২০২৪ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ থাকলেও একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে হাথুরুসিংহেকেও বলে ব্যাপক জল্পনা রয়েছে। কিন্তু তাকে বরখাস্ত করলে বড় ধরণের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বিসিবিকে।
বাংলাদেশের কোচ হিসেবে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, বিসিবির কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘এটা আমার ব্যাপার না। এটি বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
বিশ্বকাপের আগে দলকে সাজাতে যথেষ্ট সময় পাননি বলে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন হাথুরুসিংকেহ।
তিনি বলেন, ‘আপনি জানেন, আমি সাত মাস আগে শুরু করেছি, আমার হাতে সাত মাসই ছিল। নিয়ন্ত্রের বাইরে থাকা কিছু জিনিস ঘটে গেছে। সেসব নিয়ে আলোচনার সঠিক জায়গা বা সময় এটা নয়। এই মুহূর্তে আমার ভাবনায় শুধু এই ম্যাচ, পরের ম্যাচটি আমরা কিভাবে জিততে পারি।’
হাথুরু আরও বলেন, ‘মাত্র সাত মাস হলো দায়িত্ব পেয়েছি, এর মধ্যে খুব বেশি কিছু করার নেই। আমি যেটা করেছি, তা হলো দল যেখানে ছিল, সেখান থেকে এগিয়ে নিতে এবং তারা যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তা নিশ্চিত করা। সত্যি বলতে, আমার আসল কাজ শুরু বিশ্বকাপের পর। কারণ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি আলাদা। এরপর এখান থেকে দলকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। সেটা ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, তাদের সেরা পারফর্মের জন্য যতটা সম্ভব চাপমুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।’
সেমিফাইনালে খেলার কথা বলেছিলেন হাথুরুসিংহেও। তিনি বলেন, ‘এটি কোন ভুল মন্তব্য ছিলো না। কারণ আমরা সবাই ভাল করতে চাই। আমাদের বড় লক্ষ্য আছে এবং আমাদের ভালো করার প্রত্যাশা আছে এবং আমরা ভেবেছিলাম যে আমরা করতে পারবোন কিন্তু তারপরও আমরা অর্জন করতে পারিনি। এটি কোন ভুল মন্তব্য ছিলো না।’