উপহারের লোভে শেবাগকে আউট দেননি আসাদ রউফ!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৬, ২০২২, ০৪:৫৬ পিএম

উপহারের লোভে শেবাগকে আউট দেননি আসাদ রউফ!

ভারতীয় ব্যাটসম্যান বীরেন্দ্র শেবাগকে ক্রিকেট দুনিয়ায় কে না চেন। স্বমেজাজে থাকলে বিপক্ষের বোলারদের ব্যাট দিয়ে ‘খুন’ করতেন তিনি। আকাশী-নীল জার্সিতে ওপেন করতে নেমে ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিও রয়েছে তার ঝুলিতে। ভারতীয়দের মধ্যে এখনও পর্যন্ত টেস্টে দুটো ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে তারই দখলে। পাঁচ দিনের ক্রিকেট হোক বা ৫০ ওভারের খেলা অথবা টি-টোয়েন্টির ময়দান, বীরেন্দ্র শেবাগের বিধ্বংসী মেজাজে সব যেন একাকার মনে হত।

এ হেন শেবাগকে সাজঘরে ফেরাতে পারলে বিপক্ষের বোলারদের মুখে চওড়া হাসি দেখা যেত। তবে আউট হওয়া সত্ত্বেও এক বার ফেরেননি শেবাগ। সৌজন্যে পাকিস্তানের প্রাক্তন আম্পায়ার আসাদ রউফ। কী ভাবে তা সম্ভব হল? খোলসা করেছেন খোদ শেবাগ।

সালটা ২০০৮। ভারত সফরে এসেছে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। মোহালিতে বসেছে সে সফরের দ্বিতীয় টেস্ট। সে সময়ই নাকি আউট হওয়া সত্ত্বেও মাঠ থেকে ফেরেননি শেবাগ। সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছিলেন সে কথা।

ব্যাটিং বিধ্বংসী হলেও ব্যবহারে নাকি ততটাই মোলায়েম শেবাগ। মিষ্টি কথায় নাকি তার জুড়ি মেলা ভার। আর রসিকতা করতেও ছাড়েন না। মোহালি টেস্টের আম্পায়ার রউফের সঙ্গেও এমনই এক রসিকতা করেছিলেন শেবাগ। তবে রউফ তা সত্যি ভেবে নেন।

শেবাগ জানিয়েছেন, ২০০৮-এ অজিদের বিরুদ্ধে মোহালি টেস্টে আউট ছিলেন তিনি। তবে আঙুল তোলেননি আম্পায়ার রউফ। কেন?

শেবাগের দাবি, ব্র্যান্ডেড টি-শার্ট, সানগ্লাস, জুতোর শখ খুব ছিল রউফের। এটা শেবাগ জানতেন। এক বার নাকি রউফকে সে সব উপহার দিয়ে মজা করেই বলেছিলেন, “দেখবেন, এর পর আমাকে আউট দেবেন না যেন!”

রউফের সঙ্গে রসিকতা করলেও তা নাকি সত্যি ভেবে নেন তিনি। মোহালির দ্বিতীয় টেস্টেই তার ফল মিলেছিল। মিচেল জনসনের বলে শেবাগ পরিষ্কার আউট হলেও আঙুল তোলেননি রউফ। এমনটাই দাবি করেছেন শেবাগ।

শেবাগ জানিয়েছেন, ৮০-র ঘরে ব্যাট করার সময় মিচেলের শর্ট পিচড বলে কাট করতে গিয়েছিলেন তিনি। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হ্যাডিনের দিকে চলে যায়। তালুবন্দি করেন হ্যাডিন। শেবাগ ‘আউট’! অথচ আঙুল তোলেননি সে ম্যাচের আম্পায়ার রউফ।

শেবাগ কেন আউট নন? রেগেমেগে রউফের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন অজি অধিনায়ক পন্টিং। রউফ অনড়, শেবাগ আউট নন।

মিচেলের বল শেবাগের ব্যাটের কানায় লেগেছে। স্পষ্ট শোনা গিয়েছে ব্যাটে-বলের শব্দ। এ বার রউফকে ছেড়ে শেবাগের কাছে ছুটে আসেন পন্টিং। “তুমি কি আউট?” জানতে চান পন্টিং।

পন্টিংকে নির্লিপ্ত ভাবে শেবাগ বলেন, “হ্যাঁ!” এর পর ফের রউফের কাছে গিয়ে পন্টিং বলেন, “কী ভাবে আউট দিলেন না! এমনকি শেবাগ পর্যন্ত বলছে যে বল ব্যাটের কানায় লেগেছে!” এ বার পন্টিংয়ের সঙ্গে শেবাগের কাছে ছুটে আসেন আম্পায়ার রউফও। শেবাগের কাছে জানতে চান, বল কি তার ব্যাটে লেগেছে? তখন আগের থেকেও নির্লিপ্ত ভাবে শেবাগ বলেন, “না!”

এর পর আর তর্ক বাড়াননি পন্টিং। মিচেলের বলে ‘আউট’ হওয়ার পরেও ক্রিজে জমেছিলেন শেবাগ। তবে বেশি ক্ষণ নয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ওই ঘটনার পর শতরান হারিয়ে ৯০-তেই ঘরে ফেরেন তিনি।

এই ঘটনার বহু বছর পর শেবাগের স্বীকারোক্তি, বল তার ব্যাটের কানায় এত জোরে লেগেছিল যে সাজঘর থেকেও সে শব্দ নাকি শোনা গিয়েছিল। তবে আম্পায়ার তাকে আউট দেননি। তাই ক্রিজ ছাড়েননি।

শেবাগ আরও জানিয়েছেন, রউফ তার বিরুদ্ধে আঙুল না তোলায় সে সময় তর্ক জুড়ে দেন পন্টিং। বলেন, “তুমি তো এইমাত্র বললে ব্যাটে বল লেগেছিল!” শেবাগের পাল্টা জবাব ছিল, “মিস্টার পন্টিং, আউট হলেও তুমি কখনও ক্রিজ ছেড়ে যাও না। আর আশা করছ যে অন্যরা তা করবে!”

পন্টিংকে সাফ বলেছিলেন শেবাগ, “আম্পায়ারকে নিজের কাজ করতে দাও। তুমি তোমার কাজ করো। আমাকেও আমার কাজ করতে দাও।ৎ

মোহালির সে টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩২০ রানে জিতেছিল ভারত। তবে এত বছর পর শেবাগের স্বীকারোক্তিতে প্রশ্ন উঠছে আম্পায়ার রউফের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে। সে সময় আইসিসি-র এলিট প্যানেলে ছিলেন রউফ। ২০০৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সে প্যানেলের সদস্য রউফকে স্পট-ফিক্সিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ করে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসি।

Link copied!