ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩, ১২:৪০ পিএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানে আরও একবার তরুণদের মুখোমুখি হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানটি আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রচার করা হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলতে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। এবারের অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার দেখা গেছে যাদের উপস্থিতিই আলোচনার খোরাক যোগাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখছেন, এই সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের বেশিরভাগই সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে কথা বলে না। দেশে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি অত্যন্ত বেশি। দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশছোঁয়া পর্যায়ে। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা ভয়ংকর দুশ্চিন্তায় আছেন। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। রিজার্ভের সংকট রয়েছে। এমনকি দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটার মত পরিস্থিতি হতে পারে যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন বেশ কয়েকবার!
প্রধানমন্ত্রীর লেটস টক অনুষ্ঠানে রাবা খান, ডানা ভাই জোস, রাকিন আবসার, কারিনা কায়সার, রাফসান দ্য ছোটভাই, তাশরিফ খান, নিওন এন্ড অন, স্যাম জোন হ্যান্ডেল গুলোর কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মত ইনফ্লুয়েন্সার উপস্থিত ছিলেন।
নেটিজেনরা অভিযোগ করছেন, এই ইনফ্লুয়েন্সারদের অনেকেই মূল সমস্যাগুলো নিয়ে কখনই তেমনভাবে কথা বলতে দেখা যায়নি। কেউ কেউ তো বলেই বসেছেন, তারা ভিউ বিক্রি করে টাকা কামান। তারা কিভাবে দেশের কোটি কোটি তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করেন, আর কিভাবেই বা তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্টির সমস্যার কথা তুলে ধরবে যেখানে নিজেরা ফ্যান্সি লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত।
আরেক নেটিজেন বলছেন, এই ইনফ্লুয়েন্সারদের কন্টেন্টগুলো হয় কীভাবে সুন্দর করে মেকআপ করা যায়, পাশের বাসার আন্টি কিংবা তাদের কার্যকলাপ নিয়ে মজা করা টাইপের। যদি এসব করেই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় তবে সমাজের মূল সমস্যা নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন কী!
ডানা ভাই জোস নামের কনটেন্ট ক্রিয়েটর প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ফেসবুক পোস্টটি তাঁদের উভয়ের শাড়ির রং মিলে যাওয়া বিষয়ক।
সেখানে একজন কমেন্ট করে বসেছেন, “সুযোগ পেলে এই ইনফ্লুয়েন্সাররা আয়য়ুব খান টিক্কা খানের সাথেও ছবি তুলত।”
কমেন্টটির রিপ্লাইও করেছেন ডানা। তিনি লিখেছেন, পতাকার সাথে একটা ছবি দিলেই দেশপ্রেমিক হয়ে গেলেন, এমন না। ডানা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেন, কিভাবে আপনি এতটা নিশ্চিত হলেন যে আমরা আমাদের সমাজ, দেশ নিয়ে ভাবি না?
অপর একজন লিখেছেন, আমাদের ইনফ্লুয়েন্সারদের রাজনীতি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অনেকেই মুখ ভেংচিয়ে বলে আই হেইট পলিটিক্স কিন্তু এরাই প্রধানমন্ত্রীর লেটস টক প্রোগ্রামে!
অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন। সেঁজুতির পরিবারের সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা।
এবারের লেটস টক অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এবং তরুণদের নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণ বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েই কিছু মানুষ বাহবা দেন এবং কিছু মানুষ সমালোচনা করেন। এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
এই আয়োজনে প্রায় ৩০০ তরুণ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণ করেন যার মধ্যে ইনফ্লুয়েন্সারের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। কিন্তু লেটস টক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে কাজ করে যাওয়া সংগঠকদের নিয়ে তেমন সমালোচনা বা আলোচনা নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও মোট উপস্থিত তরুণদের ৯৫ শতাংশই বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আর আগে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ আয়োজিত হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও ইয়ুথদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় যা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী রণকৌশল হিসেবেই পরিচিত।
২০০৮ এ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ৭ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন দেড় কোটিরও বেশি তরুণ। তাঁর দল এইবারও তরুণদের গুরুত্ব দিতে চায়।