জহির রায়হান: অকালে হারানো উজ্জ্বল নক্ষত্র

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১৯, ২০২২, ০৯:২২ পিএম

জহির রায়হান: অকালে হারানো উজ্জ্বল নক্ষত্র

অকালে হারানো উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম জহির রায়হান। কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাহিত্যিক জহির রায়হানের ৮৮তম আজ জন্মদিন।

মাত্র ৩৭ বছর জীবনের পরিধি ছিলো জহির রায়হানের। এই ক্ষুদ্র জীবনে দাপটের সঙ্গে চলচ্চিত্র ও সাহিত্যে দোর্দণ্ড প্রভাববিস্তার করে গেছেন। স্বপ্লায়ু জীবনেই এই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এই চলচ্চিত্রকার। কেবল সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নয়- স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন জহির রায়হান। ছোট্ট এই ক্ষুদ্র জীবনে একজন মানুষ কতোটা দিতে পারেন, জহির রায়হান যেন ছিলেন তার সীমারেখা। যাঁর জীবন ছিল  অবিস্মরণীয় কীর্তিতে ভরা।

১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট তিনি ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  কিন্তু তার মৃত্যুর দিনটি অজ্ঞাতই রয়ে গেছে আজো। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুর ঢাকায় তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ধারণা করা হয় মিরপুরে বিহারী এলাকায় ছদ্মবেশী পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলির আঘাতে তিনি মারা যান।

জহির রায়হান নামটি আসলে রাজনীতির সূত্রে পাওয়া। ১৯৫৩ বা ৫৪ সালের দিকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। এ সময়ে মনি সিংহের দেওয়া রাজনৈতিক নাম ‘রায়হান’ গ্রহণ করে তিনি হয়ে যান জহির রায়হান ।

তার বাবার নাম মোহাম্মদ এমদাদউল্লাহ এবং মায়ের নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। বাবা ছিলেন একজন আইন ব্যবসায়ী।



রাজনৈতিক নানা অস্থিরতা তাকে নাড়া দিতো । ছাত্র জীবনে রাজনৈতিক কারণে একাধিকবার জেলে গিয়েছেন তিনি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময়ে জেলে যান। ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে মিছিল করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি অত্যন্ত মেধাবী একজন নির্মাতা ছিলেন তিনি। তার চলচ্চিত্রগুলো এখনো বিশাল একটা জায়গাজুড়ে আছে বাঙালির মনে ।

চলচ্চিত্রে জহির রায়হানের অভিষেক হয় ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাভেরা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। এই চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন আখতার জং কারদার। পরিচালক হিসেবে জহির রায়হানের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৬১ সালে, 'কখনো আসেনি' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রের অভিনয় করেছিলেন খান আতাউর রহমান, শবনম, সুমিতা দেবী। একই বছর সুমিতা দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জহির রায়হানের। এই চলচ্চিত্র জহির রায়হানের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র হলেও চারটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ফেলেছিলেন সুমিতা দেবী। এর আগের বছর প্রকাশিত হয়েছিলো জহির রায়হানের প্রথম উপন্যাস 'শেষ বিকেলের মেয়ে'। পরের বছর জহির রায়হান নির্মাণ করেছিলেন সোনার কাজল। তবে জহির রায়হান মূল আলোচনায় আসেন তারও এক বছর পরে অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কাঁচের দেয়াল চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছিল এটি। জহির রায়হান পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মাননা।

জহির রায়হানের হাত ধরেই পাকিস্তানের চলচ্চিত্র রঙিন চলচ্চিত্রের জগতে প্রবেশ করেছিল। ১৯৬৪ সালে তার নির্মিত উর্দু চলচ্চিত্র 'সঙ্গম' ছিল পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের ৬টি গানই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বছরটি জহির রায়হানের জন্য দারুণ একটি বছর ছিল। একই বছরে প্রকাশিত হয়েছিল তার রচিত কালজয়ী উপন্যাস 'হাজার বছর ধরে'। এই উপন্যাসের জন্য ১৯৬৪ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন জহির রায়হান।

 তিনি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন ১৯৫৭ সালে। নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনো আসেনি’। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। এ ছাড়াও ‘বাহানা’, ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’ তা নির্মিত কয়েকটি আলোচিত চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ আজো ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ । ৎ

তাঁর  সাংবাদিক জীবন শুরু হয় ১৯৫০ সালে। তার প্রথম গল্প ‘সূর্যগ্রহণ’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে।

Link copied!