পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৯ রানের জন্য চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পাননি ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। ৯১ রানে আউট হন তিনি। মুশফিকের ৯১ ও আগের দিন সেঞ্চুরি পাওয়া লিটন দাসের ১১৪ রানের সুবাদে সফরকারীদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
জবাবে ব্যাট হাতে ইনিংস শুরু করে রাজত্ব করেছে পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলি ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আব্দুল্লাহ শফিক। বাংলাদেশ বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষে ৫৭ ওভারে বিনা উইকেটে ১৪৫ রান তুলেছে পাকিস্তান। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে এখনও ১৮৫ রানে পিছিয়ে পাকিস্তান। শেষ দুই সেশনে কোন উইকেট ফেলতে না পারায় দ্বিতীয় দিনটি হতাশারই ছিলো বাংলাদেশী বোলারদের জন্য।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম দিনই টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন দাস। দিন শেষে ১১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। অন্যপ্রান্তে নামের পাশে ৮২ রান রেখে দিন শেষ করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। লিটন-মুশফিকের ব্যাটিং দৃঢ়তায় প্রথম দিন শেষে ৮৫ ওভারে ৪ উইকেটে ২৫৩ রান করেছিলো বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় দিন সবার চোখ ছিলো মুশফিকের দিকে। মুশফিকের অষ্টম সেঞ্চুরি দেখা অপেক্ষায় ছিলো তারা। আর লিটনের সেঞ্চুরির ইনিংসটি কতটা বড় হয়, সেটি দেখার ছিলো।
কিন্তু দিনের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে লিটনের বিদায় নিশ্চিত করেন পেসার হাসান আলি। ২৩৩ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১৪ রান করে আউট হন লিটন। আউট হওয়ার আগে পঞ্চম উইকেটে মুশফিকের সাথে ৪২৫ বলে ২০৬ রান করেন লিটন।
লিটনের বিদায়ে ক্রিজে আসেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ইয়াসির আলি। দারুন কভার ড্রাইভে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খুলেছিলেন ইয়াসির। কিন্তু হাসানের বোলিংয়ের সামনে হার মানেন ইয়াসির। ৪ রান করে হাসানের বলেই বোল্ড হন ইয়াসির।
দিনের শুরুতে ৩৪ বলের ব্যবধানে দুই সতীর্থকে হারালেও, সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন মুশফিক। নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান তিনি। কিন্তু ৯৯তম ওভারে পেসার ফাহিম আশরাফের ডেলিভারিতে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে পরাস্ত হন মুশফিক। পাকিস্তানীদের আবেদনে সাড়া দিয়ে আউটও দেন আম্পায়ার। উইকেট বাঁচাতে রিভিউ নেন মুশফিক। শেষ রক্ষা হয়নি তার। এতে টেস্টে চতুর্থবারের মত নাভার্স-নাইন্টিতে আউট হন মুশফিক। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আটবার সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় গিয়ে আউট হওয়া মুশি নিজের ইনিংসে ১১টি চার মারেন।
দলীয় ২৭৬ রানে শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মুশফিক। এতে ৩শর নীচে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে বাংলাদেশ। তবে সেটি হতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। দুই টেল-এন্ডার তাইজুল ইসলাম ও আবু জায়েদকে নিয়ে ৫৯ রান যোগ করেন মিরাজ। অষ্টম উইকেটে তাইজুলকে নিয়ে ২৮ ও নবম উইকেটে আবু জায়েদকে নিয়ে ২৬ রান যোগ করেন মিরাজ।
১১৫তম ওভারে পরপর দুই বলে আবু জায়েদ ও এবাদতকে শিকার করে বাংলাদেশকে ৩৩০ রানে আটকে রাখেন হাসান। হাসানের তোপে আজ ৭৭ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা।
হাসানের বলে আবু জায়েদ ৮ ও এবাদত নিজের প্রথম বলেই আউট হন। ১১ রান করা তাজুলকে আউট করেন আফ্রিদি। ৩৮ রানে অপরাজিত থেকে যান মিরাজ। মিরাজের ব্যাট থেকে ৬টি চার আসে।
৫১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ইনিংসের সেরা বোলার হাসান। ১৬ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার করেন হাসান।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর নিজেদের ইনিংস শুরু করে পাকিস্তান। দেখেশুনে খেলে ২২ ওভারে দলের রান হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছে দেন দুই ওপেনার আবিদ ও শফিক।
২৮তম ওভারে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন আবিদ। ৩৭তম ওভারে তিন অংকে পৌঁছায় পাকিস্তানের স্কোর। আর ৫৪তম ওভারে বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হককে ছক্কা মেরে অভিষেক ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন শফিক।
তবে ৫৭তম ওভারের পর আলো-স্বল্পতার কারনে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। পরে দিনের খেলার ইতি টানেন আম্পায়াররা। স্কোরবোর্ডে ১৪৫ রান তুলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন আবিদ ও শফিক। ১৮০ বল খেলে ৯ বাউন্ডারি ও দুই ওভার বাউন্ডারিতে ৯৩ রানে অপরাজিত আছেন আবিদ। ২টি করে চার-ছক্কায় ১৬২ বলে ৫২ রানে অপরাজিত আছেন শফিক।
নিজেসহ পাঁচ বোলার ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল। কিন্তু কেউই সাফল্য পাননি।