বিশ্বব্যাপী দাম প্রায় ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও সরকার আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাসায়নিক সারের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কৃষকের স্বার্থসুরক্ষা ও খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। জনস্বার্থে সরকারের নেওয়া ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে সার প্রণোদনা (ভর্তুকি) বাড়িয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও অর্থবছর শেষে এই বরাদ্দ বাড়াতে হতে পারে বলে মনে করছেন বাজেট সংশ্লিষ্টরা।
দাম নিয়ন্ত্রণে সার ও বীজে ভর্তুকি
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কৃষককে সার ও বীজসহ কৃষি উপকরণে প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত তথা বিগত ১৩ বছরে শুধু সারেই সরকার ভর্তুকি দিয়েছে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকিতে ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল।
আর চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকার সারবাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রেখেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের প্রকৃত ভর্তুকি প্রায় ১৩ হাজার ৩৩২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যদিও ভর্তুকি বেড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক আন্দোলন এড়ানো এবং নির্বাচনের আগে খামার খাতে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত কোনো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা যাবে না। তাই সম্প্রতি অর্থ বিভাগের সুপারিশের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট পরিকল্পনায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে করণীয় সবকিছু করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিক্রিয়ায় আমরা সারের দাম না বাড়ানোর সুপারিশ করেছি। কারণ এখানে বিপুল সংখ্যক গ্রামীণ শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে দেশের কৃষি খাতে মোট ৩৮.৩০ শতাংশ শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছে। যাদের জিডিপিতে অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ।
অন্যদিকে বাজেট নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেন, এ বছর সরকারের সারে ভর্তুকি বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আগামী ২০২২-২৩ সালের বাজেটে কৃষিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সারের দাম ও ব্যয়
গত অর্থবছরে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের আমদানি ব্যয় ছিল ৩২ টাকা, টিএসপি ৩৩ টাকা, এমওপি ২৩ টাকা, ডিএপি ৩৭ টাকা, যা চলতি অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রম ৯৬ টাকা, ৭০ টাকা, ৫৪ টাকা ও ৯৩ টাকায়। তবে কৃষকদের মধ্যে প্রতি কেজি ইউরিয়া যথাক্রমে ১৬ টাকা, টিএসপি ২২ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা এবং ডিএপি ১৬ টাকায় বিতরণ করা হচ্ছে।
সার্বিক খরচের বিচারে বর্তমানে প্রতি কেজি সারের বিপরীতে ইউরিয়ায় ৮২ টাকা, টিএসপিতে ৫০ টাকা, এমওপিতে ৪১ টাকা এবং ডিএপিতে ৭৯ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাসায়নিক সারের চাহিদা ৫৭.৫০ লাখ টন। এর মধ্যে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া, ৭.৫ লাখ টন টিএসপি, ৭.৫ লাখ এমওপি এবং ১৬.৫ লাখ ডিএপি।