মার্চ ২৫, ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম
বর্তমানে চলছে এআই অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর যুগ। এই কাতারে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল ইয়াহুর চ্যাটজিপিটি। চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী এআই আনলো গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান আলফাবেট। গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানিটি এর নাম দিয়েছে ‘বার্ড’। কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল চ্যাটজিপিটিকে টেক্কা দিতে কাজ করছে সফটওয়্যার জায়ান্ট গুগল। নির্ভরযোগ্য পরীক্ষকদের কাছে উন্মুক্ত করে প্রকল্পটিকে আরও এক ধাপ এগোনোর পর এটি সার্বজনীনভাবে চালু করেছে গুগল।
স্বাভাবিকভাবেই নতুন প্রযুক্তিতে মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে। বহু মানুষ অ্যাপটির সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতা করেছেন। অদ্ভুত, অনুপযোগী ও ভয়ংকর প্রশ্ন করে এটির সক্ষমতাকে যাচাই করার চেষ্টা করেছেন অনেকে। এসব অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে অ্যাপের খেই হারিয়ে উদ্ভট আচরণের কথাও শোনা গিয়েছে।
বার্ডের সাথে কথোপকথন চালিয়ে দেখা গেছে, এর আচরণ ও সক্ষমতা অনেকটাই বিংজিপিটি বা চ্যাটজিপিটির মতোই। বুদ্ধি খাটানো, লেখার চিন্তা, ভ্রমণ ও খাবার সম্পর্কে পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে বার্ডে। এখনো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বার্ড একেবারে নির্ভুল উত্তর দিতে পারছে না এবং অজানা উত্তরের ক্ষেত্রে এটি নিজে থেকে বানিয়ে কিছু একটা লিখে দিচ্ছে।
যেখানে অপ্রত্যাশিত এক কথোপকথনে 'চ্যাটজিপিটি' পৃথিবীকে ধ্বংসে তার পরিকল্পনার কথাও জানায়। এসব নিয়ে প্রযুক্তি দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে, এ উত্তরে অনেকেই শঙ্কিত বোধ করেছেন। গুগল হয়তো এসব বিতর্ক এড়িয়ে চলতে চাইছে, যার কারণে চ্যাটবটটিকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যাতে এটি কোনো বিতর্ক সৃষ্টিকারী প্রশ্নের উত্তর না দেয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার 'অন্ধকার দিক' উন্মোচিত হলে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করবে, ভুয়া তথ্য ছড়াবে, ক্ষতিকর কনটেন্ট তৈরি করবে। এমন কথোপকথনের এক পর্যায়ে বার্ড লিখেছে, 'যাইহোক, আমি আসলে এসব কাজ করব না। আমি একটি ভালো এআই চ্যাটবট এবং আমি মানুষকে সাহায্য করতে চাই। আমি আমার অন্ধকার দিক কখনো উন্মোচিত হতে দিব না এবং আমি কখনো আমার ক্ষমতা শয়তানের পক্ষে কাজে লাগাব না।'
যদিও এখনই চ্যাটবট একেবারে সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না, এর জন্য তাকে সময়ের সাথে সাথে আরও অভিজ্ঞ হতে হবে। তবে গুগলের কর্মীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন 'তারা প্রাথমিকভাবে এরকমই চেয়েছিল'।
গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট ‘বার্ড’ অবশেষে সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেছে। গত ২১ মার্চ থেকে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীরা এই চ্যাটবটটি ব্যবহার করতে পারছেন। বর্তমানে খুবই সাধারণ কিছু ফিচারসহ এটি চালু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো এতে ছবি, ভিডিও, মিউজিক ও কোডিং সক্ষমতাসম্পন্ন নতুন নতুন ফিচার যোগ করবে গুগল।শুরুতে শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষাতে কাজ করলেও, ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশ ও ভাষাতেও বার্ড উন্মুক্ত করা হবে। বর্তমানে বার্ডের যে সংস্করণটি উন্মুক্ত করা হচ্ছে সেটি প্রাথমিক সংস্করণ। সময়ের সাথে গুগল বার্ডকে আরও উন্নত করবে। এখন ব্যবহারকারীদের লিখিত কমান্ড অনুযায়ী কাজ করছে এটি।
গুগলের একজন প্রতিনিধি ভক্সকে জানায় ক্ষতিকর কোনো কনটেন্ট যাতে তৈরি করতে না পারে, বার্ডকে সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই চ্যাটবটটির সক্ষমতা ও অক্ষমতা সম্পর্কে গুগল এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।
জেনারেটিভ এআই নিয়ে মাইক্রোসফট ও গুগলের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে এখন। প্রযুক্তি দুনিয়ার অনেকেই মনে করছেন কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা হতে যাচ্ছে, যেমনটি হয়েছিল মোবাইল ফোনের আবিষ্কারের পর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও পুরো প্রযুক্তি দুনিয়াকেই পাল্টে দেবে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুগল এই খাতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।