বৈচিত্রময় খেলা ফুটবলের বিশ্বকাপ আসরের বর্ণাঢ্য যত রেকর্ড

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১১, ২০২২, ০৩:০১ পিএম

বৈচিত্রময় খেলা ফুটবলের বিশ্বকাপ আসরের বর্ণাঢ্য যত রেকর্ড

গোলের খেলা ফুটবল। একটি বল, দুই গোলরক্ষক আর দুই পক্ষের বিশ জনের রুদ্ধশ্বাস এক ফুটবল দখলের লড়াই। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই খেলার সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন বসতে যাচ্ছে কাতারে। প্রতি চার বছরে একবার আসে এই বিশ্বকাপ। বিশ্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল জাতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করবার এই উৎসব। প্রতিবার বিশ্বকাপ জন্ম দেয় নতুন নতুন তারকার। প্রতিবার ভাঙে কতো না রেকর্ড। রেকর্ডও হয় তার চেয়ে বেশী। সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাস। এখানে বিশ্বকাপ ফুটবলের নানা রেকর্ড এর একটি তালিকা দেওয়া হল। 

বেশিবার বিশ্বকাপ খেলা

মেক্সিকান অ্যান্তোনিও কারভাহাল (Antonio Carbajal – ১৯৫০, ৫৪, ৫৮, ৬২, ৬৬), জার্মানির লোথার ম্যাথিউস (Lothar Matthäus – ১৯৮২, ৮৬, ৯০, ৯৪, ৯৮)ও ইতালির জিয়ানলুইজি বুফন (Gianluigi Buffon – ১৯৯৮( শুধু দলে ছিলেন), ২০০২, ০৬, ১০, ১৪) ৫টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে এই রেকর্ডের অংশীদার হওয়ার সুযোগ রয়েছে শুধুমাত্র মেক্সিকোর রাফায়েল মারকুয়েজের (Rafael Márquez)। মেক্সিকোর হয়ে ২০০২ সালের বিশ্বকাপ থেকে টানা ৪টি বিশ্বকাপ খেলেছেন এই কিংবদন্তী। মেক্সিকোর হয়ে ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮ খেললেই ইতিহাসের চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে ৫টি বিশ্বকাপ খেলার অনবদ্য কৃতিত্ব হবে মারকুয়েজ।

বেশি বার বিশ্বকাপ জয়

বিশ্বকাপ সবচেয়ে বেশি ৫ বার জিতেছে ব্রাজিল, ইতিহাসের ২৫% শিরোপা গিয়েছে তাদের দেশে।তারা ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪, ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জয় করেছে। একইসঙ্গে, ব্রাজিলই একমাত্র দেশ যারা সবগুলো বিশ্বকাপ অর্থাৎ ২১টি আসরেই অংশগ্রহণ করেছে। ব্রাজিলের পর  চার বার করে বিশ্বকাপ জয় করে দ্বিতীয় স্থানে আছে জার্মানি (১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০, ২০১৪) ও ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২, ২০০৬)।

সর্বকনিষ্ঠ ও সর্বজ্যেষ্ঠ

১৯৮২ বিশ্বকাপে মাত্র ১৭ বছর ১ মাস ১০ দিন বয়সে যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলে এখনও পর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় নর্দ্যান আয়ারল্যান্ডের (Northern Ireland)  নরম্যান হোয়াইটসাইড(Norman WHITESIDE)। সর্বজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ম্যাচ  খেলেছেন কলম্বিয়ার (Columbia) ফারিদ মান্দ্রাগন (Faryd MONDRAGON)।  ২০১৪ সালে জাপানের বিরুদ্ধে খেলার দিন বয়স ছিল ৪৩ বছর ৩ দিন।

শিরোপাহীন সর্বোচ্চ

বিশ্বকাপ শিরোপা না জিতেও সবচেয়ে বেশিবার এই আসরে অংশগ্রহণকারী দেশটি হলো মেক্সিকো (১৫)। শিরোপাজয়ী অন্য তিন দেশ স্পেন (১৪), ইংল্যান্ড (১৪) ও ফ্রান্সের (১৪) চেয়ে বেশি বিশ্বকাপ খেলেছে মেক্সিকো।

দুই দেশ এক খেলোয়াড় 

এমন মজার ঘটনারও সাক্ষী ফুটবল বিশ্বকাপ। ভিন্ন দুই দেশের হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেছেন লুইস মন্টি ( Luis Monti)। ১৯৩০ সালে অর্থাৎ প্রথমবার আর্জেন্টিনার হয়ে। দ্বিতীয়বার ১৯৩৪ সালে ইটালির হয়ে। ভিন্ন দুই দেশের হয়ে বিশ্বকাপের ৯ ম্যাচে ৩ টি গোল করার রেকর্ড রবার্ট প্রসিনেকির দখলে। যুগোস্লোভিয়া (১৯৯০) এবং ক্রোয়েশিয়া (১৯৯৮, ২০০২)-র হয়ে খেলে গোল করেছিলেন।

বেশি কার্ড

সুন্দর ফুটবলের দেশ হিসেবে পরিচিত ব্রাজিলের দখলেই বেশি (১১) লাল কার্ড দেখার মত খারাপ রেকর্ডও। ব্রাজিলের নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটিও লাতিন আমেরিকার – আর্জেন্টিনা (১০) ও উরুগুয়ে (৯)। অবশ্য হলুদ ও লাল কার্ডসহ সর্বমোট কার্ডের হিসেবে সবচেয়ে বেশি কার্ড দেখতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে (১২০টি)।  

বেশি গোল

এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড করেছেন রাশিয়ার ওলেগ সালেনকোর  (Oleg Salenko)। ১৯৯৪ সালে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ৫ গোল করেন। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন ফ্রান্সের জ্য ফন্টেইন (Just Fontaine)। মোট ১৩ গোল। সব বিশ্বকাপ মিলিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা জার্মানীর মিরোস্লাভ ক্লোসে (Miroslav Klose)। বিশ্বকাপের ২৯ টি ম্যাচে মোট ১৬ টি গোল করেন তিনি। 

কাতার বিশ্বকাপে ভেঙে যেতে পারে যেসব রেকর্ড

ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলা। একটি বিশ্বকাপ দিয়ে সারাবিশ্বের সামনে পরিচিত হয়ে উঠতে পারেন যে কোনো এক উদীয়মান ফুটবলার, আবার অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়েও যেতে পারে দুনিয়া কাঁপানো কোনো ফুটবলারের ক্যারিয়ার।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল বেশ কিছু খেলোয়াড় এবং কয়েকটি দেশের সামনে সৃষ্টি করতে পারে নতুন রেকর্ড। ফিফা ডট কম তেমনই ১০টি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড তুলে ধরেছে, যেগুলো এবার নতুন করে গড়া হতে পারে কিংবা নতুন করে লিখতে হতে পারে।

আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে কাতার বিশ্বকাপ। এবার দেখে নেওয়া যাক, সেই ১০টি রেকর্ড, যেগুলো এখন বেশ আলোচনায় রয়েছে...

১২৩

বিশ্বকাপের ইতিহাসে যখন থেকে কার্ড দেখানোর প্রচলন শুরু হয়েছে, তখন থেকে এখনও পর্যন্ত আর্জেন্টিনার চেয়ে কোনো দল বেশি হলুদ কার্ড দেখেনি। আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা মোট ১২৩টি হলুদ কার্ড দেখেছে। লাল কার্ড দেখার শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। তারা এখনও পর্যন্ত ১১টি লাল কার্ড দেখেছে বিশ্বকাপে। উরুগুয়ে দেখেছে মোট ৯টি। এবার তারা নিশ্চয়ই চেষ্টা করবে, সংখ্যাটা যেন দুই অংক স্পর্শ না করে।

১০৯

ব্রাজিল এবং জার্মানি- বিশ্বকাপে অন্যতম সফল দুটি দেশ। এই দুটি দলই এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ১০৯টি করে ম্যাচ খেলেছে। এই দুই দলের যে কোনো একটি দল এককভাবে শীর্ষে উঠে যেতে পারে, কিংবা সমানও থাকতে পারে। কাতার বিশ্বকাপেই দেখা যাবে এই রেকর্ডটা লেখা হয় কার পক্ষে।

আর্জেন্টিনা এই বিশ্বকাপেই ইতালিকে পেছনে ফেলে উঠে যেতে পারে তৃতীয় স্থানে। কারণ, এবার যেহেতু ইতালি নেই, সে কারণে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের মুখোমুখি হলেই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপে খেলা হবে ৮৪টি ম্যাচ। ৮৩ ম্যাচ খেলে এখনও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি। আর্জেন্টিনার খেলা ম্যাচ সংখ্যা ৮১টি।

Brazil-germany

আর্জেন্টিনা যদি গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচে জয়লাভ করে, তাহলে তাদের মোট জয়ের সংখ্যা হবে ৪৬টি। এ ক্ষেত্রেও ইতালিকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে লা আলবিসেলেস্তারা।
 
৪৩ জয় নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে আর্জেন্টিনা, ৪৫ জয় নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি। সর্বোচ্চ ৭৩টি জয় ব্রাজিলের, ৬৭টি জয় জার্মানির।৭০ইরানের বিপক্ষে যখন নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে ইংল্যান্ড, তা হবে বিশ্বকাপে তাদের ৭০তম ম্যাচ। সে সঙ্গে তালিকায় তারা উঠে যাবে পঞ্চম স্থানে। ইকুয়েডরের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামলেই বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ সংখ্যা হয়ে যাবে ৫২টি।
 
সুইডেনকে পেছনে ফেলে তালিকায় সেরা দশে ঢুকে যাবে ডাচরা।২৭বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পরাজয় মেক্সিকোর। এখনও পর্যন্ত ১৬টি বিশ্বকাপে মোট ৫৭টি ম্যাচ খেলেছে তারা। মেক্সিকানরা বিশ্বকাপে শততম গোল হজম করার চেয়ে আর মাত্র দুটি ধাপ দুরে রয়েছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যেটা তৃতীয় সর্বোচ্চ গোল হজম করার ঘটনা। সবচেয়ে বেশি ১২৫টি গোল হজম করেছে জার্মানি। ব্রাজিল হজম করেছে ১০৫টি গোল।

Mexico

২০

মাত্র ১১ জন ফুটবলার বিশ্বকাপের ইতিহাসে ২০টি কিংবা তার বেশি ম্যাচ খেলেছে। লিওনেল মেসির মত খেলোয়াড় এই তালিকায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। মেসির ২০ ম্যাচের মাইলফলক ছুঁতে প্রয়োজন আর একটি ম্যাচ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর প্রয়োজন ৩টি ম্যাচ। পর্তুগালের হয়ে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচই যদি খেলেন, তাহলে তিনি এই তালিকায় উঠে আসতে পারবেন।

১৯

বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ১৯টি ম্যাচ খেলেছেন মেসি। তার নিজেদের দেশের কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার ম্যাচ সংখ্যাকে ছুঁতে আর মাত্র ২টি ম্যাচ প্রয়োজন মেসির। বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা খেলেছেন ২১টি ম্যাচ। যদি মেসি এবং আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে এবং তিনি সাত ম্যাচের সবগুলোই খেলেন, তাহলে তিনি জার্মানির লোথার ম্যাথাউসকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৬টি ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়ে ফেলবেন।

১০

ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম এরই মধ্যে বিশ্বকাপে ১২টি ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন। কাতার বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত যে ২৯টি দল যোগ্যতা অর্জন করেছে, সবগুলো দেশের কোচদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব তার। এরমধ্যে জিতেছেন ৯টি ম্যাচ। আর মাত্র একটি জয়, তাকে এনে দেবে গৌরবময় ১০ম জয়ের মাইলফলক।

Franch Coach

বিশ্বকাপের ইতিহাসে আর মাত্র ৬জন কোচ ১০টি জয়ের মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছেন। তারা হলেন- হেলমুট স্কন, লুই ফেলিপে স্কলারি, মারিও জাগালো, জোয়াকিম লো, কার্লো আলবার্তো পেরেইরা এবং অস্কার তাবারেজ।

এখনও পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে যে ২৯টি দল যোগ্যতা অর্জন করেছে, তাদের মধ্যে ৮টি দলের কোচ রয়েছেন, যারা সংশ্লিষ্ট দেশটির নাগরিক নন।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এর আগে ৪টি বিশ্বকাপের প্রতিটিতেই গোল করার রেকর্ড গড়েছেন। যে রেকর্ড রয়েছে কেবল পেলে, উই সিলার এবং মিরোস্লাভ ক্লোসার। যদি কাতার বিশ্বকাপে একটি গোলও তিনি করতে পারেন, তাহলে তিনিই হয়ে যাবেন একমাত্র ফুটবলার, যার ৫টি বিশ্বকাপেই গোল করার অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে।

গত তিনটি বিশ্বকাপেরই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় ইতালি, ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেই স্পেন এবং ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় জার্মানি। এবার কী হবে? বলা বাহুল্য, এবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

Link copied!