কাতার বিশ্বকাপের ট্রাজিক নায়ক এমবাপ্পে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ১৯, ২০২২, ০৬:৫৬ এএম

কাতার বিশ্বকাপের ট্রাজিক নায়ক এমবাপ্পে

রুদ্ধশ্বাস বিশ্বকাপের ফাইনাল মঞ্চে দারুণ হ্যাটট্রিক করলেন ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন এমবাপ্পে। তার পরেও হেরে মাঠ ছাড়তে হল তাঁকে। অথচ একার কাঁধেই দলকে টানলেন পুরোটা খেলায়। আর্জেন্টিনার হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকার নামের লটারির ভাগ্যপরীক্ষায় হেরে গেলেন তিনি।

গত বার বিশ্বকাপের ফাইনালে করছিলেন একটি গোল। দেশ সেবার জিতেছিল বিশ্বকাপ। এ বারের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। অথচ এই ইতিহাস গড়া কীর্তি বিফলে গেল। ১৯৬৬ সালের ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের পরে দ্বিতীয় বার কোনও ফুটবলার ফাইনালে এই কীর্তি করলেন।

Mbappe inner

হ্যাটট্রিক করে সোনার বুট পেয়েও কাপ না পাওয়ার কষ্ট ভুলতে পারবেন না এমবাপ্পে। ছবি: ফিফা

দ্বিতীয়ার্ধে দুরন্ত ফুটবল খেলেছেন এমবি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে মাঠ ছাড়তে হল তাঁকে। খেলার জন্য নায়কের মর্যাদা পেলেও বিশ্বকাপ জেতা হল না। এ বারের বিশ্বকাপে ৮ গোল করে সোনার বুট নিজের করে নিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও চোখের জলে মাঠ ছাড়লেন তিনি। তবে যাওয়ার আগে বুঝিয়ে দিলেন, আগামী দিনে বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে একাই দাপিয়ে বেড়াবেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার।

প্রথমার্ধে এমবিকে আটকে রেখেছিল আর্জেন্টিনা। তাঁর প্রধান অস্ত্র প্রান্ত ধরে দৌঁড়। যে গতিতে তিনি দৌঁড়ান তাঁর সাথে একমাত্র উসেইন বোল্টের দৌঁড়ের তুলনা হয়। সেই দৌঁড় বন্ধ করার জন্য মোলিনা ও ম্যাক অ্যালিস্টারকে রেখেছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি। ফলে বার বার আটকে যাচ্ছিলেন তিনি। ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশঁম অলিভিয়ের জিহুকে তুলে নেওয়ায় প্রধান স্ট্রাইকারের ভূমিকায় চলে যান এমবাপ্পে। ফলে আরও বেশি নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রথমার্ধে মাত্র এক বার আর্জেন্টিনার বক্সে ঢুকতে পেরেছিলেন এমবাপ্পে।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে খেলা যত গড়াল তত ম্যাচে দাপট দেখাতে শুরু করলেন এমবি। বয়সের ছাপ কোথায় হয়তো দেখা গেল মেসির খেলায়। বল ধরছিলেন। কিন্তু সেভাবে আক্রমণ তৈরি করতে পারছিলেন না। অন্য দিকে এমবাপ্পে নিজের পছন্দের জায়গায় খেলা শুরু করতেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন। বক্সের মধ্যে ওটামেন্ডি ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। জোরালো শটে গোল করেন এমবাপে। দু’মিনিট পরেই বক্সের মধ্যে থেকে ডান পায়ের দুরন্ত শটে ফ্রান্সের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন এমবাপ্পে। চলন্ত বলে তিনি যে শটটি মারলেন তা এ বারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোল। নির্ধারিত সময়ের শেষ ১০ মিনিটে এগিয়েও যেতে পারত ফ্রান্স। এমবির জোরালো শট একটুর জন্য বাইরে বেরিয়ে যায়।

অতিরিক্ত সময়ে মেসির গোলে আর্জেন্টিনা আবার এগিয়ে গেলে মনে হচ্ছিল ফ্রান্সের হার নিশ্চিত। কিন্তু তখনও মাঠে ছিলেন একজন চিতাগতির এমবাপ্পে। বক্সের বাইরে থেকে গোল লক্ষ্য করে শট মারেন তিনি। বক্সের মধ্যে সেই বল পারেদেসের হাতে লাগায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। আরও এক বার পেনাল্টি থেকে গোল করেন এমবাপে। সেই সাথে মেসিকে টপকে বিশ্বকাপে সব থেকে বেশি ৮ গোল হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু তারপরেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিততে পারল না ফ্রান্স।

টাইব্রেকার থেকে এমবাপে আবার গোল করলেও তাঁর দলের দুই সতীর্থের শট বাঁচিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। শেষ পর্যন্ত চোখের জলের বিশ্বকাপ ছাড়তে হল তাঁকে। তবে নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপেই বিশ্বের সেরাদের তালিকায় ঢুকে পড়লেন এমবাপ্পে। এবং জানান দিয়ে গেলেন যে তিনি আবারও আসবেন বিশ্বকাপের মঞ্চে, তাঁর ক্ষিপ্র গতি নিয়েই!

Link copied!