কামিকাজি ড্রোন: বিশ্বের নতুন আতঙ্ক!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৯, ২০২২, ০৭:৫৯ পিএম

কামিকাজি ড্রোন: বিশ্বের নতুন আতঙ্ক!

সেদিন সকালে হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠতে থাকলো পুরো শহর। কিছু বুঝার আগেই দেখা গেল ধ্বংসস্তূপ। বিদ্যুৎ হয়ে গেল বন্ধ। কোনো যোগাযোগের মাধ্যমও খোলা নেই। বহু সময় যুদ্ধ করে আসা ইউক্রেনবাসী তখনও জানে না বিশাল এক হামলা হয়ে গেছে দেশটির বুকে। ধ্বংস হয়ে গেছে তেলের মজুদ। বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, সড়ক-সব ব্যবস্থাই গুঁড়িয়ে দিয়েছে এক নতুন ঘাতক।

 

প্রতিবারের মতো এবারও মিসাইল হামলা হয়েছে ভাবা হলেও দেখা গেল হামলার ধরনের সঙ্গে হামলায় ব্যবহার করা যন্ত্রটিও পাল্টেছে রাশিয়া। আর এই নতুন আত্মঘাতী বিধ্বংসী যন্ত্রটি বানিয়ে রাশিয়ার কাছে তুলে দিয়েছে ইরান।

এই ভয়াবহ যন্ত্রটি নিয়ে পশ্চিমাবিশ্বের বেড়েছে মাথাব্যথা ও বিশ্বজুড়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ও যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

সেসব আলোচনার আলোকে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি বিশ্বের যুদ্ধক্ষেত্রের নতুন আতঙ্কের সঙ্গে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আলোচনার তুঙ্গে আছে কামিকাজি ড্রোন। কেন এই ড্রোনটি নিয়ে এত আলোচনা, কেন ড্রোনটিকে এতটা বিশেষভাবে নেয়া হচ্ছে পুরো ‍বিশ্বজুড়ে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার কামিকাজি ড্রোন হামলা

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়া যে হামলা চালায় সেটি কামিকাজি ড্রোন দিয়েই চালানো হয়েছে বলে দাবি করে ইউক্রেন। এ হামলায় কিয়েভের অনেক বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়। তবে কামিকাজির ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই ব্যবহার করছে এই ড্রোনগুলো।

তবে রাশিয়ার হাতে এখন ঠিক কতটি কামিকাজি ড্রোন আছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, রাশিয়াকে যুদ্ধ করার জন্য কয়েকশ ড্রোন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ইরান। যদিও ইরান এ দাবি অস্বীকার করে। ক্রেমলিনও যুক্তরাষ্ট্রের এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে ইউক্রেনের পাল্লা ভারি না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৭০০ ড্রোন দেয়া হবে যা কামিকাজির মতোই কার্যকরী হবে।

কি এই কামিকাজি ড্রোন?  

বিস্ফোরকসহ এই ড্রোনটিকে লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে উড়িয়ে দেয়া হয়। লক্ষ্যের কাছে গিয়ে কোথাও লাগলেই বিস্ফোরকসহ সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায় ড্রোনটিও। এজন্যই এর নাম দেয়া হয়েছে কামিকাজি অর্থাৎ আত্মঘাতী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের জাহাজ লক্ষ্য করে এমন আত্মঘাতী বা কামিকাজি হামলা চালাত জাপান। কামিকাজি শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘স্বর্গীয় হাওয়া’।

ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার গতিতে চলা এই ড্রোনটি উড়ে যেতে পারে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত। লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি গিয়ে ঘুরতে থাকে নির্দেশনা পাওয়ার জন্য।

এই ড্রোনগুলো সম্পর্কে সামরিক বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ক্রাম্প বলেন, ‘এগুলো অনেক নিচু দিয়ে উড়ে চলে। এগুলো ঢেউয়ের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে পাঠানো যায়। এই ড্রোনের ঝাঁক আকাশ প্রতিরক্ষা দিয়ে মোকাবেলা করা অনেক কঠিন।’

বলা হচ্ছে, কামিকাজি ড্রোনটি আসলে ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ ড্রোন। যাকে রাশিয়াতে বলা হয় জেরানিয়াম-টু। জেরানিয়াম ফুলের নামের এই ড্রোনটিতে বিস্ফোরক ভর্তি একটি যুদ্ধাস্ত্র থাকে।

 কি সুবিধার জন্য রাশিয়ার পছন্দ এই কামিকাজি ড্রোনটি?

মনে করা হচ্ছে, অন্যান্য ড্রোনের তুলনায় দামে সস্তা হওয়ায় রাশিয়া শাহেদ-১৩৬ ড্রোনটি বেছে নিয়েছে। এই ড্রোনটি কিনতে খরচ হয় ২০ হাজার আমেরিকান ডলার। এগুলো আত্মঘাতী ড্রোন হওয়ায় একবারই ব্যবহার করা যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে রাশিয়া ভেবেচিন্তে নির্দিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধ্বংস করতে এই ড্রোন ব্যবহার করছে- যার মধ্যে আছে তেল মজুদ কেন্দ্র, যোগাযোগ ও সামরিক স্থাপনা।

শত্রুপক্ষের অবস্থান জেনে হামলা করার জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন দুই পক্ষই ব্যবহার করছে বিভিন্ন রকমের ড্রোন তবে এর মধ্যে বেশি আলোচনায় আছে এই কামিকাজি ড্রোনটিই। এই ড্রোনটি সহজে শনাক্ত করা যায় না বলা হলেও ইউক্রেন দাবি করছে তারা কামিকাজি ড্রোন শনাক্ত করতে ইতোমধ্যে ৭ শতাংশ সক্ষম হয়েছে।

Link copied!