মার্চ ৩০, ২০২২, ০৯:০৬ এএম
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া সামরিক অভিযান চলার মধ্যে শান্তি আলোচনার জন্য বেশ কয়েকবার রুশ ও ইউক্রেনিয় প্রতিনিধি দল বৈঠকে বসলেও ফলাফল ছিল অনেকটাই শূণ্য। তবে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আবহানে সাড়া দিয়ে দেশটির ইস্তাম্বুল শহরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনেকটা কার্যকর অগ্রগতি দেখতে পেয়েছে বিশ্ববাসী।
বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতিনিধির জানিয়েছেনম, জোট নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে থাকতে তারা রাশিয়ার দাবি মানতে রাজি। অন্যদিকে রুশ প্রতিনিধিরা বলছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এরই মধ্যে, কিয়েভ এবং চেরনিহিভের আশেপাশের এলাকাগুলোয় সামরিক তৎপরতা ও হামলার মাত্রা কমিয়েছে মস্কো।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ-ইউক্রেন সংঘাত বন্ধে একের পর এক উদ্যোগ যখন অসফল, তখন শঙ্কা ছিল ইস্তাম্বুল বৈঠক নিয়েও। তবে গতকাল মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে আশার কথা শোনান সব পক্ষই। যুদ্ধবিরতির জন্য বিভিন্ন শর্তে একমত হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। একমাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে প্রথমবারের মতো দেখা মিললো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতির।
বিবিসি জানায়, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভোসোগলু বলেন, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে দু’পক্ষই সমঝোতায় পৌঁছেছে। যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে তারা একমতও হয়েছেন। এর মধ্যে যেসব বিষয়গুলো বেশি গুরুতর সেগুলো নিয়ে আলোচনায় বসবেন রুশ ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই দেশের প্রেসিডেন্টও আলোচনায় বসার সম্ভাবনার কথাও বলেন তিনি।
পুতিন প্রশাসনের দাবি ছিল জোট নিরপেক্ষ দেশ হতে হবে ইউক্রেনকে। অর্থাৎ ন্যাটো কিংবা রুশবিরোধী কোনো জোটে অংশ নেবে না ইউক্রেন। শর্ত মেনে নিয়ে কিয়েভ জানায়, সেক্ষেত্রে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ দেশটিতে কোনো সামরিক আগ্রাসন চালাবে না রাশিয়া। এক্ষেত্রে সমঝোতায় থাকতে হবে কানাডা, পোল্যান্ড, ইসরায়েল ও তুরস্কের মতো দেশগুলোকে।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলেক বলেন, মস্কোর শর্তের বিপরীতে আমরা ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়েছি। কোনো ধরনের আগ্রাসন চালানো হবে না ইউক্রেনে। ক্রাইমিয়ার মতো যেসব এলাকা রুশ দখলদারিত্বের মধ্যে রয়েছে সেসব এলাকা নিয়ে আলোচনা হবে মস্কোর সাথে। ১৫ বছর মেয়াদী এই আলোচনা চলাকালে সেখানে কোনো আগ্রাসন চালাতে পারবে না রাশিয়া।
রুশ প্রতিনিধি দলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেগুলো আমরা বিবেচনা করছি। আশা করছি সেই ইস্যুগুলোকে মাথায় রেখেই আমরা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবো। এরই মধ্যে আমরা প্রস্তাবনা তৈরি করে সেগুলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে পাঠিয়েছি।
প্রসঙ্গত, উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করা নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় মস্কো-কিয়েভের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করতে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগ থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখে মস্কো। তবে ওই কৌশল কাজে না আসায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। এর দুদিন পর ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে ইউক্রেন ছেড়েছেন প্রায় ৩৯ লাখ মানুষ। যুদ্ধে ইউক্রেনের ১৩শ’ সেনা এবং রাশিয়ার ১৬ হাজার ৪০০ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন সরকার। তবে রাশিয়া বলছে, যুদ্ধে তাদের ১ হাজার ৩৫১ সেনা নিহত এবং ইউক্রেনের আড়াই হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।