সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ০৫:২৭ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটার প্রতিবাদে গাছের খণ্ডিত অংশে কাফন মুড়িয়ে মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) প্রায় ৫০ বছরের পুরনো ১৫টি গাছ কেটে ফেলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে প্রতিবাদ সভা করেন শিক্ষার্থীরা। শুধু এ কৃষ্ণচূড়াই নয় কেটে ফেলে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)এবং কলাভবনের মাঝামাঝি আরও দুটি ইউক্যালিপটাস গাছ। গাছ কাটার ক্ষোভ আর আক্ষেপে প্রতিবাদী অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় তারা বলেন, আমাদের ভালো লাগার সঙ্গে অনেক খানি জুড়ে আছে এসব গাছগুলো। অনেক স্মৃতি আর আন্দোলনের সাক্ষী ক্যাম্পাসের এসব গাছ। এসময় শিক্ষার্থীরা কেটে ফেলা গাছটির স্থানে রোপন করেন আরেকটি কৃষ্ণচূড়া।
শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বাধীনতার পতাকা যেখানে উড়ানো হয়েছিল সেখানে এ গাছটা সাক্ষী ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় যখন খুলছে সেখানে শিক্ষার্থী নির্মল আবহাওয়া দরকার সেখানে গাছ কাটা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কলাভবন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষ্ণচূড়া গাছটির ডালপালা কাটা হয়েছে। আর কাণ্ডটির অর্ধেকও কেটে নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করছে, দুর্ঘটনা এড়াতে এ কৃষ্ণচূড়া গাছটি কাটা হয়েছে।
গাছ কাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরি ক্যালচার সেন্টারের পরিচালক ড. মিহির লাল সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, 'শিকড় নরম হয়ে গাছটি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। রাস্তার দিকে ৪৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে হেলে গিয়েছিল। গাছটি পড়ে গেলে যে কেউ ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারত। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি কাটা হয়েছে। এখানেই আরেকটি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করা হবে।
এদিকে, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) কর্তৃপক্ষ অর্ধশত বছরের বেশি পুরনো প্রায় ৫০টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এরই মধ্যে অন্যগুলোও কেটে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে যোগ দেয় স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবিদরা।
মানববন্ধনে আসা ব্যক্তিরা গণমাধ্যেমে জানান, সারা বাংলাদেশে যত তাপমাত্রা হয় সবচেয়ে বেশি হয় রাজশাহীতে। যদি গাছ টাকা হয় তাহলে গরম কিন্তু আরো বেড়ে যাবে। অনেক অপরিকল্পিত বিল্ডিং আছে, ক্লাস আছে সেগুলো ব্যবহার না করে ৬০০ কোটি টাকা থেকে ১০০ কোটি টাকা ভাগ খাওয়ার জন্য এ কাজগুলো করা হচ্ছে। অন্যদিকে, পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রাচীন গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেও উন্নয়ন সম্ভব।
তবে গাছ কাটার যুক্তি হিসেবে রুয়েট কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন নির্মাণের জায়গা তৈরি করতে এসব গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, আশির দশক থেকে ক্যাম্পাসে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়নি। সম্প্রতি সরকার ৬’শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১০টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ, যার জন্য মোট ৫০টি গাছ কাটা হবে।’ এরই মধ্যে ১৫টি গাছ কাটা হয়েছে বলেও তিনি জানান।