টালমাটাল পাকিস্তানে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট শনিবার, পড়ে গেছে স্থানীয় মুদ্রার মানও

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ৮, ২০২২, ০১:৪৮ এএম

টালমাটাল পাকিস্তানে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট শনিবার, পড়ে গেছে স্থানীয় মুদ্রার মানও

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। এখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপরও ভোটাভুটি হবে। এ জন্য শনিবার দিন ধার্য করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতেও প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির ঐতিহাসিক দরপতন হয়েছে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য এখন দাঁড়িয়েছে ১৯১ রুপি।

পাঁচ দিনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে বৃহস্পতিবার রাতে এ রায় দেন। প্রতিক্রিয়ায় ইমরান খান বলেছেন, কাল আমি ক্যাবিনেট ও পার্লামেন্টারি বৈঠক ডেকেছি। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দ্যেশেও ভাষণ দেব। জাতির কাছে আমার বার্তা, আমি পাকিস্তানের জন্য সব সময় লড়েছি এবং শেষ মূহুর্ত পর্যন্তও লড়ে যাবো, শেষ বল পর্যন্ত লড়ে যাবো।

Imran Khan 2-1

এদিকে নতুন আদেশে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, ‘পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই প্রধানমন্ত্রীর। এ–সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হলো।’ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরির খারিজ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও বাতিল করেছে আদালত।

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালত জানায়, অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা না করে অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না।

গত ৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী ইমরানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।

এ পুরো প্রক্রিয়াকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের দিনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন। সর্বোচ্চ আদালত তখন বলেছিল, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তাঁরা নজর রাখছে। পরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি শেষে পার্লামেন্টে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হলো।

ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্তকে বৃহস্পতিবার আদালত ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলার পরপরই জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) সভাপতি শাহবাজ শরিফ বলেন, আদালত যদি মনেই করেন অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের সিদ্ধান্ত ‘ত্রুটিপূর্ণ’, তাহলে পার্লামেন্ট পুনর্বহাল হওয়া উচিত।

Widening rich-poor gap | Political Economy | thenews.com.pk

আর পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, ডেপুটি স্পিকারের ‘অসাংবিধানিক’ সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের গণতন্ত্রকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তিনি সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের উদ্দেশে বলেন, বিরোধীরা চান, সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কার আনা হোক। নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে একটি বিলের খসড়াও করা আছে।

এর আগে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার দিন বিরোধীরা বলেছিলেন, নির্বাচনের ময়দানে নামার ব্যাপারে তাঁরা ভীত নন। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য। শাহবাজ শরিফ তখন বলেছিলেন, তাঁদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যায়িত করে খারিজ করে দেওয়ার বিষয়টি চরম বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়।

ইমরান খান ‘গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহ’ করেছেন বলে অভিযোগ করেন শাহবাজের ভাই ও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।

জোট সরকারের ওপর থেকে শরিক দলগুলো তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করায় বিপাকে পড়েন ইমরান খান। পরে নিজ দলেরই একটা অংশ তাঁকে ছেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি পুরো প্রতিকূল হয়ে ওঠে তাঁর। অনাস্থা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ১৭২ ভোট ইমরানের পক্ষে ছিল না। এ কারণে ভোটাভুটি হলে তাঁর ক্ষমতাচ্যুতি অনেকটাই নিশ্চিত ছিল বলে মনে করছিলেন সবাই।

বিরোধীদের দাবি, ২০১৮ সালে সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান। এখন তাঁর মাথার ওপর থেকে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ছায়া সরে গেছে। যদিও কোনো পক্ষই বিষয়টি স্বীকার করে না।

স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। জেনারেলরা নানা অজুহাতে শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কয়েক মাস ধরেই পাকিস্তানি রুপির দরপতন হচ্ছিল। এ অবস্থা আরও গতি পায় গত মার্চে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে বিরোধী দল অনাস্থা প্রস্তাব আনলে। ডলারের বিপরীতে গত এক মাসে রুপি দর হারিয়েছে ৬ শতাংশ। আর ২০২১ সালের জুলাই থেকে রুপির ১৮ শতাংশ দরপতন হয়েছে।

সূত্র: এএফপি, জিয়ো নিউজ ও দ্য ডন।

Link copied!