ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, “আমরা আগামীতে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন চাই। এ জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গ্রহণযোগ্য লোক নিয়োগের দাবি উঠেছে। বাংলাদেশে আসলে নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য কোনো লোক নেই। তবে যোগ্য ও দক্ষ লোক যেন কমিশনে আসে সেই দাবি আমরা সার্চ কমিটিকে জানিয়েছি।”
রবিবার সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠককালে মুনতাসীর মামুন এ সব কথা বলেন। এদিন বিকেল ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ২৩ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে সার্চ কমিটি।
সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে যারা আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন— সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক), প্রজন্ম ৭১-এর আসিফ মুনির তন্ময় ও ডা. নুজহাত চৌধুরী, সাংবাদিক ও লেখক হারুন হাবীব, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি নুরুল আলম, শিক্ষাবিদ ড. আইনুন নিশাত, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গোলাম কুদ্দুস, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মফিদুল হক ও শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল।
এছাড়া কবি ও সাহিত্যিক মহাদেব সাহা, গীতিকার ও সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল কবির চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ, দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে সভায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে মুনতাসীর মামুন অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, “ইসি গঠনে জুডিশিয়াল ও সিভিল সার্ভিস থেকে লোক নিয়োগের প্রথা রয়েছে। আমরা এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা দাবি করেছে ইসি গঠনে সুশীল সমাজ থেকে যেন অধিকাংশ লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। কমিশনে নারী ও সংখ্যালঘু থেকে যেন তাদের প্রতিনিধি রাখা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন না।”
মুনতাসীর মামুন বলেন, “কোন রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটির কাছে কোন কোন নাম প্রস্তাব করেছে— তা অনেকেই প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। আমি এর বিরোধিতা করেছি। কেননা নাম প্রকাশ পেলে ওই ব্যক্তিকে মনে করা হতে পারে— তিনি অমুক দলের আস্থাভাজন। তাই আলাদাভাবে নাম প্রকাশ না করে সম্মিলিতভাবে নাম প্রকাশ করার কথা বলেছি। প্রস্তাবিত নাম থেকে রাষ্ট্রপতি যে ১০টি নাম বাছাই করবেন তা যেন প্রকাশ করা হয় আমরা সেই দাবি জানিয়েছি।”
এদিকে ইসিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী লোকদের সার্চ ইসিতে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে বলেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না- এমন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ দেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সংগঠন থেকে সার্চ কমিটির কাছে ১০ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছি। সেখানে নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইসিতে সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তির চেয়ে দক্ষ ও সাহসীদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছি। যাতে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কোনো বিধি ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি পিছপা না হন।”
শাহরিয়ার কবির বলেন, “আমরা এও বলেছি কোন দল কাদের নাম জমা দিল তা যেন জনসম্মুখে প্রকাশ করা না হয়। সর্বোপরি একটি সম্মিলিত চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের জন্য সার্চ কমিটির কাছে আমরা অনুরোধ করেছি।”
এর আগে, এর আগে গতকাল শনিবার প্রথম দফায় বেলা সোয়া ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিশিষ্টজনদের মতামত নেয় সার্চ কমিটি। ওই দু’টি সভায় সমাজের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এর মধ্যেই সংসদের শেষ অধিবেশনে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন পাস হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এই কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের পদে যোগ্য ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রস্তাব করবে রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেবেন।