তরুণ আইনজীবী। যুক্তির শানে প্রখর বুদ্ধিমত্বা তাঁর। যে কোন আইনি সমস্যাকে বিশ্লেষণ করার অসীম ক্ষমতা ও যুক্তির সাহায্যে তার সমাধান উপস্থাপনা করার দক্ষতা রয়েছে তাঁর। কিন্তু তাঁর ছাত্র জীবনে আইনজীবী হওয়ার কোনো স্বপ্নই ছিল না! তাঁর স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার।
এ জন্য তিনি নিয়েছিলেন সায়েন্স। কিন্তু তাঁর পরিবারের একটি দুর্ঘটনা সবকিছু একেবারে উলটপালট করে দেয়। তাঁর জীবনের লক্ষ পরিবর্তন করে দেয়। ডাক্তার থেকে হয়ে উঠেন আইনজীবী এবং তাতেই তিনি আজ সফল। তাঁকে যে সফল না হয়ে উপায়ও ছিল না। আজ যাকে নিয়ে এই গল্প তিনি হলেন সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তাহের আহমেদের কন্যা তিনি। ১৬ বছর আগে বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে নিজেই সেই মাধ্যমিকে থাকতেই সিদ্ধান্ত নেন আইনজীবী হতে হবে তাঁকে।
অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ, স্ত্রী সুলতানা আহমেদ এবং ছেলে সানজিদ আলভী আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
সেগুফতা তখন ইন্টার মিডিয়েটের ছাত্রী। ওই ঘটনার পর সেগুফতাদের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। তছনছ হয়ে যায় তাঁদের সাজানো গোছানো ছোট্ট পরিবার।
বাবা হত্যার বিচারের জন্য আদালতে আদালতে ঘুরতে থাকেন সেগুফতা ও তাঁর পরিবার। বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার কোন অগ্রগতি দেখতে পান না তাঁরা। বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে। এ ঘটনায় হতাশ না হয়ে বরং জেদ চেপে বসে সেগুফতার মনে।
সেগুফতা ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দেন। মনে তাঁর বাবা হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার দুর্দমনীয় ইচ্ছে। সেই প্রতিশোধ আইনী মাধ্যমেই। শুরু করেন আইনে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পাঠে। আইন পড়া শেষ করে নিজেই হয়ে উঠেন বাবা হত্যা মামলার প্রধান আইনজীবী। বাবার নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১৬ বছর পর অবশেষে ৫ এপ্রিল চূড়ান্ত রায় পান নিজেদের পক্ষে।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি (বাঁ থেকে), অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ, স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, আইনজীবী শাকিলা রওশন ও তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
এই হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ। পাশাপাশি আরও দুই আসামি জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও তার স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালামের যাবজ্জীবন দণ্ডও বহাল রেখেছে আদালত।
রায় ঘোষণা শেষ হলে সেগুফতা আদালতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই কান্না বিজয়ের কান্না। এই কান্না আনন্দের কান্না। এই কান্না প্রয়াত বাবার খুনের বিচার পাওয়ার কান্না।