জুলাই ২৯, ২০২৩, ০৯:০৪ পিএম
বাংলাদেশের আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পারিবেশ কী হবে-ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুসন্ধানমূলক মিশন ঠিক সেই বিষয়টিই দেখছিল বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর। একই সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় মন্তব্য করে এই নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত’ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমন গিলমোর এসব কথা বলেন।
ইইউ’র মানবাধিকার বিষয়ক এই বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, “নির্বাচন সহিংসতামুক্ত হবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা। আর তাহলেই তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।”
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকা সফর করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল। অনুসন্ধানী মিশন দলটি ঢাকায় অবস্থানকালে সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। এছাড়া, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাথেও ইইউ প্রতিনিধি দলও বৈঠক করেন। চলতি বছরের ২৩ জুলাই ঢাকা ছেড়ে যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই দলটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই দলটিরে সফর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ইমন গিলমোর বলেন, “কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করা হবে সে বিষয়ে আমি কোনো রাজনৈতিক মতামত দেব না। কিন্তু যখন কেউ নির্বাচনের কথা ভাবে, তখন শুধু ভোটের দিন কী হবে তা নিয়ে চিন্তা করে না। নির্বাচনের পরিবেশ কী হবে তা নিয়েও আমরা ভাবছি। অনুসন্ধানমূলক মিশন ঠিক সেই বিষয়টিই দেখছিল।”
তিনি বলেন, “বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশের বেশিরভাগ নির্বাচনই সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়। রাজনীতির বৈশিষ্ট্য হলো গণতান্ত্রিক সম্পৃক্ততা। আর এর মাধ্যমে জনগণ তাদের পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও সম্মানজনক করে তুলে এবং এরপর ভোটাররা তাদের সিদ্ধান্ত নেয়।”
গিলমোর আরও বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা এখানে একটি অনুসন্ধানমূলক মিশন সম্পন্ন করেছেন। তবে তারা এ সম্পর্কে এখনই বিস্তারিত বলতে পারছেন না। কারণ তারা মিশনটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছেন। যার ওপর ভিত্তি করেই মূলত নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল মোতায়েন করা হবে কিনা- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক এই বিশেষ প্রতিনিধি মনে করেন, নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর জন্য আরও বড় ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে দেশের আরও কাজ করতে হবে।
গিলমোর বলেন, “আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়েও কথা বলেছি। এই আইন মূলত কীভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিক সমাজের কার্যক্রমকে সীমিত করছে তা নিয়ে আমাদের মত প্রকাশ করেছি।”
ডিএসএ সংশোধনের বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে গিলমোর বলেন, “এই সঙ্গে অতি দ্রুতই তা সংশোধনের জন্য আমলে নেবে সরকার। আমরা আশা করি এটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তৈরি করবে, আমরা দেখব কী ধরনের সংশোধনী আনা হচ্ছে।’
শ্রম অধিকার ইস্যুতে গিলমোর বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষেত্রে তারা কিছু উন্নতি দেখতে চান। ‘শ্রম অধিকার ও বাণিজ্য বিষয়ে অগ্রাধিকারের পুরো পরিবেশটি পরিবর্তিত হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতে আমি এসব বিষয় তুলে ধরেছি।”
তিনি আরও বলেন, ‘গত চার বছরে বিশ্বব্যাপী বড় পরিবর্তনগুলোর মধ্যে এটি একটি এবং এটাই আমি দেখেছি।’
গিলমোর উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে । কোন পণ্য কোথা থেকে আসছে, কী কী শর্তাবলী রয়েছে, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হচ্ছে কিনা এসব বিষয়ে ভোক্তারা সচেতন হয়ে উঠছে।
একই সঙ্গে পণ্য তৈরির সময় তার জন্য ন্যায্য মূল্য দেওয়া হচ্ছে কিনা- সে সম্পর্কেও ভোক্তারা সচেতন হয়ে উঠছেন।
তিনি বলেন, ‘তবে বিনিয়োগকারীরাও শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হয়ে উঠছেন।’
গিলমোর বলেন, ‘আমি মনে করি ব্যবসাগুলোর বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার, বিশেষ করে কাজের পরিবেশ ও শ্রম অধিকারকে কীভাবে দেখা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করেই অবস্থার পরিবর্তন হয়।’
ইইউ’র এই বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, ‘বাণিজ্য অগ্রাধিকারের স্কিমে কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখন যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই বাণিজ্য পছন্দগুলো শর্তসাপেক্ষ। আমি মনে করি আমরা অগ্রগতি দেখেছি। আমি মনে করি, আমাদের এখন দেখতে হবে তাদের (প্রাসঙ্গিক নিয়মাবলী) বাস্তবায়ন।’
গিলমোর বলেন, প্রাসঙ্গিক বাণিজ্য ও শ্রম ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য সেপ্টেম্বরে একটি মনিটরিং মিশন আসবে।
মানবাধিকারকে রাজনৈতিক লাভের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারকে আমরা সর্বজনীন হিসেবে দেখি। একটি দেশের সরকারের রাজনৈতিক গঠন বা ভেতরের রাজনৈতিক ব্যবস্থা যাই হোক না কেন, তারা মানুষের জন্য, সব জায়গার মানুষের জন্য । এসব অধিকার সব জায়গার প্রত্যেক মানুষের প্রাপ্য।’
বাংলাদেশে পাঁচ দিনের সফরে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পও সফর করেছেন গিলমোর। সেখানে রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে বৈঠকও করেন ইউরোপয়ি ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক এই বিশেষ প্রতিনিধি। সূত্র: ইউএনবি