বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, মুশতাক আহমেদের মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ এবং নিজস্ব চিন্তায় ফেইসবুকে ফ্রিল্যান্সার লেখকের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এর সাথে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত। সরকারি হেফাজতে কারাগারে তার মৃত্যুতে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তাকে কারাগারে ‘অবর্ণনীয় নির্যাতন’ চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গত বছরের ৬ মে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়।
এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে পরে এ দুজন জামিনে মুক্তি পান। মুশতাক ও কিশোরের পক্ষে বেশ কয়েকবার জামিনের আবেদন হলেও তা আদালতে নামঞ্জুর হয়।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি অবস্থায় বৃহস্পতিবার মুশতাকের মৃত্যু হয়। কী কারণে ৫৩ বছর বয়সী এই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, মুশতাক আহমেদ হঠাৎ করে অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে নিলে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ‘প্রয়োজনে’ তদন্ত কমিটি করা হবে।
তবে বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, কারাগারে ‘নির্যাতন’ করেই এই লেখককে হত্যা করা হয়েছে।
বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, “বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগতি, অসংগতি, নিয়ম-অনিয়ম, কীর্তি-অপকীর্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীনচেতা মানুষের অভিমত, বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ আজ গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকার তাদের অপকর্ম ও ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সমালোচনা যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে সেজন্য নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য লেখা বা পোস্টকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করছে না।”
যারা স্বাধীনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মত প্রকাশের চেষ্টা করছে, তাদের জীবনে ‘ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ পরিণতি’ নেমে আসছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ। মূলত মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, মুশতাক আহমেদ লুটপাটকারী কিংবা কালোবাজারি, সন্ত্রাসী ও ডাকাত ছিলেন না। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্র মুশতাক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।
মুশতাকের এই ‘নির্ভীক আত্মদানের’ মধ্য দিয়েই দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠবে এবং দেশে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক স্বাধীনতাসহ সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। মুশতাক একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের নিকট প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিনের জন্য বিরাজ করবেন,” যোগ করেন তিনি।
মুশতাক আহমেদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার শোকগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান বিএনপি মহাসচিব।