কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে ঠেকেছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসিন। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।এর আগে জাতিসংঘের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছিল কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন।এ ঘটনায় আহত হয়েছেন সাড়ে পাঁচ শতাধিক।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর বা্ংলাদেশ প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান দের ক্লাউ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর এই প্রতিনিধির বরাত দিয়ে রয়টার্সের খবরে আরও বলা হয়, ভয়াবহ আগুনে এ পর্যন্ত চার শতাধিক লোক নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের অনেকেই হয়তো মারা গেছেন। প্রায় ৪৫ হাজার লোককে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও রয়টার্সের খবরে বলা হয়।
তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যার ওই সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ সচিব বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১১। খুব কম সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আগুনে ক্যাম্পের নয় হাজার ৩০০ পরিবারের আনুমানিক ৪৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় মানুষের বসত ঘরসহ দুই শতাধিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে কেউ নিখোঁজ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘তদন্তের পর এ ব্যাপারে জানা যাবে। কেউ কেউ হয়ত আশপাশের কোনও ঘরে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে; পরে সেটা জানা যাবে।’
সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা পাশের ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা নয়ন।
তিনি বলেন, ক্যাম্পের বসত ঘরগুলো ঝুপড়ির মতো লাগোয়া হওয়ায় এবং সেসময় বাতাসের গতি বেশি থাকায় আগুন দ্রুত ছড়ায়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক কর্মীসহ স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ যোগ দেন।
ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ, এপিবিএন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের ১৮ ঘণ্টার চেষ্টার পর সকাল ৯ টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার জোনের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ।
এদিকে, ক্যাম্পের ঘর হারানো বাসিন্দাদের খাবার ও আশ্রয়ের জন্য ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় কাজ করছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াতের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের ডিসি মো. মামুনুর রশীদ। ক্যাম্পে আগুন লাগার পর পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয় বিভিন্ন এনজিওর পক্ষ থেকে।