সংসদ সদস্যরা প্রতি ৫ বছরে একবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ পান। গত নির্বাচনে নির্বাচিত এমপিদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এরই মধ্যে কিছু গাড়ি বন্দরে এসে গেলেও কয়েক দিনের মধ্যে আরও ৫২টি গাড়ি পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তবে এসব গাড়িতে শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা পাচ্ছেন না দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যরা। কারণ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন।
কাস্টমস সূত্র জানায়, শুল্ক সুবিধার আওতায় বেশির ভাগ গাড়ি টয়োটা ল্যান্ড ক্রজার, টয়োটা জিপ,টয়োটা এলসি স্টেশন ওয়াগট মডেলের। আর এসব গাড়ি আমদানি করা হয়েছে জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে। যার ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার সিসি। সাধারণত এই ধরনের গাড়ির ওপর কর ৮১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ হয়ে থাকে। যা এমপিদের দিতে হয় না।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, “শুল্কমুক্ত সুবিধার কাগজপত্র দিয়ে এসব গাড়ি আনা হয়েছে। তবে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কারনে সেই সুবিধা পাওয়া যাবে না। এখন স্বাভাবিক শুল্ক-কর দিয়ে গাড়িগুলো খালাস করতে হবে।”
জানা গেছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৭ সালে থেকে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা চালু করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এমপিদের খুশি করতেই এই সুবিধা চালু হয়। পরে ১৯৮৮ সালের ২৪ মে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যদিও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা গৃহীত হয়নি।
এদিকে কাস্টমস সূত্রে আরও জানা গেছে, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু,সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও নেত্রকোনার সাবেক এমপি সাজ্জাদুল হাসানসহ আওয়ামী লীগের একাধিক এমপিরা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় এসব গাড়ি আমদানি করেছেন। এসব গাড়ি চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং কমলাপুর আইসিডি দিয়ে আমদানি হয়েছে। আমদানিকারকের পক্ষে এসব গাড়ি খালাসের দায়িত্বে ছিলেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নাভানা লিমিটেড, গোল্ডেন স্টার এজেন্সি ও ছেরি এন্টারপ্রাইজসহ ৬-৭টি প্রতিষ্ঠান।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী ৫২টি গাড়ির আমদানি মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। সবচেয়ে কম দামের ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করা হয়েছিল প্রায় ৯৮ লাখ টাকায়। যেখানে শুল্ক দিতে গেলে এই গাড়ির দাম পড়বে প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান জানান, সংসদীয় আসনে এমপিদের কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে সরকার এই সুবিধা দিয়ে থাকে। সংসদ ভেঙে দেওয়ায় সেটা শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাসের সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করেই খালাসের অপেক্ষায় থাকা গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে হবে। সম্প্রতি যেসব গাড়ি খালাস হয়েছে, সেটা ৬ আগস্টের আগে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন ছিল। ফলে আইনিভাবে সেটা আটকের সুযোগ ছিল না। তবে যেসব গাড়ি ৬ আগস্টের পরে আমদানি হয়েছে, সেটা খালাসের সুযোগ নেই। এই ধরনের গাড়ি খালাস করতে হলে শুল্ক-কর পরিশোধ করে খালাস করতে হবে।”