টাকার ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্ব, ২৪ ঘণ্টা লাশ পড়ে ছিল উঠানে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৬:২৬ এএম

টাকার ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্ব, ২৪ ঘণ্টা লাশ পড়ে ছিল উঠানে

সংগৃহীত ছবি

জমি বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে এক ব্যক্তির লাশ ২৪ ঘণ্টা পর দাফন হয়েছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের শাকোয় মাঝিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।   হতভাগা ওই ব্যক্তির নাম মোতাহার হোসেন মুন্সি (৭৫)।

মোতাহার ঢাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরে অফিস সহকারী ছিলেন। তার বাবার নাম ছামসুল হক মুন্সি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোতাহার হোসেন মুন্সী ঢাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান। তার স্ত্রী মাসুমা বেগমকে নিয়ে তিনি ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকায় বসবাস করতেন। তাদের সন্তান নেই। কিছু দিন আগে মোতাহার হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হয়। তাই তার ঢাকার একখণ্ড জমি তিনি দুই কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এক সপ্তাহ আগে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকার আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার তিনি মারা যান। পরদিন মোতাহার হোসেনের লাশ দাফনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সযোগে পলাশবাড়ী উপজেলার শাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে আনেন তার স্ত্রী। কিন্তু লাশ দাফনে বাধা দেন মোতাহার হোসেনের ছোট ভাই নজরুল ইসলাম মুন্সী ও তার ভাতিজা হাবিবসহ পরিবারের কয়েকজন। এ সময় তারা মাসুমা বেগমের কাছে মোতাহার আলীর কাছে থাকা জমি বিক্রির দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা কোথায় কোন ব্যাংকে আছে তা জানতে চান। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে  লাশ বাড়ির উঠোনে পড়ে থাকে। স্থানীয়রা চেষ্টা করেও দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারেননি।

প্রায় ১৫ বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া নিঃসন্তান এই ব্যক্তির দেনা-পাওনা, নগদ ও ব্যাংকের জমা টাকা নিয়ে তার স্ত্রী মাসুমা বেগমের সঙ্গে চাচাত ভাই সেকেন্দার আলী মুন্সি ও ভাতিজা মানিক মুন্সির দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এর জেরে তার মরদেহ দাফনে তারা বাধা দিচ্ছিল। এ সময় মোতাহারের লাশ বাড়ির উঠানে পড়ে ছিল।

বেতকাপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিঃসন্তান মোতাহার আলীর ভাই-ভাতিজারা লাশ দাফনে আপত্তি জানানোর কারণে তা বাড়ির উঠানে পড়ে ছিল। দেনাপাওনা ও সম্পদ বিক্রির প্রায় দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা নিয়ে তার স্ত্রী মাসুমা বেগমের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান তার পরিবারের লোকজন। পরে অর্থ সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের বিষয়ে সমঝোতা হয়। মোতাহার আলীর স্ত্রী মাসুমা বেগম তার দেবর ও দেবরের ছেলে-মেয়েদের ৬০ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছেন। এর পরই নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে লাশ দাফন হয়েছে।

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অর্থসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমঝোতা হওয়ার পর মোতাহার হোসেন মুন্সির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

Link copied!