জুন ১৬, ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি আজ সোমবার বিকেল ৪টায় বৈঠকে বসবে বলে জানা গেছে। এই কমিটির প্রতিবেদন সরকারের কাছে হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত সরকারি কাজে বিঘ্ন তা সৃষ্টি হয় এমন কর্মসূচি পালন না করতে কর্মচারীদের অনুরোধ করেছেন আইন উপদেষ্টা।
সোমবার, ১৬ জুন সকালে সচিবালয়ে জাতিসংঘের বলপ্রয়োগে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে গুম সম্পর্কিত কার্যনির্বাহী দলের সদস্য গ্রাজিনা বারানোউস্কা ও আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজের সঙ্গে বৈঠক করেন আইন উপদেষ্টা। এরপর উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
আজ সোমবার বিকেল ৪টায় পর্যালোচনা কমিটি মিটিং করবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘কর্মচারী ভাইয়েরা আমাদের কাছে যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটি আমার কাছে আছে সেগুলো আমরা কীভাবে বিবেচনা করব তা ঠিক করব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা আমাদের রিপোর্ট উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তুলব।’
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব আপনারা ধৈর্য ধরে কর্মসূচি দিলে ভালো হয়। দেখেন না আমাদের কমিটির কাজ যদি পছন্দ না হয় তাহলে দেন। সচিবালয়ের কার্যক্রমে যেন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। আপনারা বিবৃতি দিতে চাইলে বিবৃতি দেন। আপনারা আমাদের সঙ্গে মিটিং করেন কিন্তু সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়। মানুষের যাতে দুর্ভোগ না হয়।’
পর্যালোচনা কমিটি প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত কর্মচারীদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানান আইন উপদেষ্টা।
কর্মচারীদের আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘উপদেষ্টা ফাওজুল ভাইসহ একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন অবশ্যই (সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ) পুনর্বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। আইন প্রণয়নের সময় আমি বিদেশে ছিলাম। পরবর্তীতে যখন আমি এটি দেখেছি আমার কাছে মনে হয়েছে অবশ্যই এটি পুনর্বিবেচনার স্কোপ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে আইনটি করে নাই। কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে আইন করা না হলেও কোনো কোনো আইনের মধ্যে এমন বিধান থাকতে পারে যারা সাবজেক্ট তাদের কাছে মনে হতে পারে আইনে বিড়ম্বনা, হয়রানির সুযোগ রয়েছে।’
এদিকে আজ সোমবার সকাল থেকে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন কর্মচারীরা। বেলা সোয়া ১১টার পর তারা সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিচে সমাবেশ করছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা কয়েকদিনের জন্য এসেছেন, চলে যাবেন। আমাদের মনে আগুন জ্বালালেন কেন?’
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কর্মচারীরা সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিচে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন তারা। সমাবেশ থেকে কর্মচারী নেতারা কালো আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।
চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরিচ্যুত করার বিধান রেখে গত ২৫ মে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। তার আগ থেকেই এই অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। চাকরি অধ্যাদেশ জারির পর তারা সচিবালয়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের পর উপদেষ্টাদের স্মারকলিপি দেন।
চাকরি অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর ভূমি সচিবের নেতৃত্বে কয়েকজন সচিব কর্মচারীদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানান। এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিব তা প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। এই অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টাকে প্রধান করে একটি কমিটি করেছে সরকার। এই কমিটিকে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। কত দিনের মধ্যে কমিটিকে সুপারিশ দিতে হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।