ভোটের ফল হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আর সেই আলোচনায় ভাসছে বাংলাদেশ। এমন মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া দায়, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের ফল নিয়ে আলোচনা করছে না।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
আর এ নিয়ে নেটিজেনরা নানা রকম মন্তব্য ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছে। ‘কমলার বনবাস’ লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন অনেকেই। সঙ্গে শেয়ার করছেন নব্বইয়ের দশকের একটি সিনেমার পোস্টার।
তখনকার খুবই জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ছিলো ‘কমলার বনবাস’। ঢাকাতেও এই নামে একটি সিনেমা হয়, একই নামে কলকাতাতেও হয় আরেকটি সিনেমা। সে সময় চলচ্চিত্র দুটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয় হয়েছিলো।
ট্রাম্প জেতার পর তিন দশক আগের সেই সিনেমা দুটির নাম আবার ফিরে এসেছে মানুষের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
চলচ্চিত্র অঙ্গনের অভিনয় শিল্পীসহ নানা শ্রেণির পেশার মানুষ শেয়ার করছেন কমলার বনবাস সিনেমার সেই সময়ের পোস্টার। অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘কমলার বনবাস’। সঙ্গে দুঃখের ইমোজি জুড়ে দিয়েছেন তিনি।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কমলার বনবাস নামে হয়েছে বহু যাত্রাপালা। গ্রামের দর্শকদের মধ্যে কমলা চরিত্রটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে মুক্তি পায় কমলার বনবাস। বিপুল ব্যবসাসফল সিনেমা ছিলো। ফিরোজ আল মামুনের পরিচালনায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেন আনোয়ার শরীফ, রেবেকা, নাসির খান।
এর এক বছর পর, অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে কমলার বনবাস নামে আরেকটি সিনেমা মুক্তি পায় কলকাতাতেও। স্বপন সাহা।র পরিচালনায় অভিনয় করেন তাপস পাল, শতাব্দী রায়। সেখানেও তুমুল জনপ্রিয়তা পায় সিনেমাটি।
সিনেমাটার কাহিনিও বেশ ট্রাজেডিতে ভরপুর। রাজা সাঁচি ও তাঁর স্ত্রী চিত্রার একমাত্র কন্যা কমলা। একদিন তিনি সখিদের সঙ্গে প্রমোদভ্রমণে বের হন। সেখানে কমলাকে দেখে রাজপুত্র কাঞ্চন কুমারের ভালো লেগে যায়।
এরপর কমলা ও কাঞ্চন কুমার দুজনেই প্রেমে পড়েন। দুই পরিবারের সম্মতিতে কাঞ্চন ও কমলার বিয়ে হয়। বাসর রাতে একজন তপস্বী চামুণ্ডা তান্ত্রিক কাঞ্চন কুমারের সামনে প্রকট হন। তিনি তাকে নীল সরোবরের কাছ থেকে নীলপদ্ম আনতে বলেন, যা তার পিতা ভগবান ভোলানাথের কাছে মানত করেছিলেন।
কাঞ্চন কুমার তার পিতার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে বাসর রাতেই নীল পদ্মার সন্ধানে রওনা হন। যাত্রাপথেই কাঞ্চন কুমার অস্বস্তি বোধ করেন এবং তার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে চান। এবার তপস্বী অলৌকিকভাবে কাঞ্চনকে স্ত্রীর সাথে দেখা করতে সাহায্য করলেন। সকালে কাঞ্চনের মা তার পুত্রবধূর অবস্থা দেখে বুঝতে পারেন রাতে তার ঘরে কোনো পুরুষ ছিলো।
আরও পড়ুন: বিশাল জয়ের পথে ট্রাম্প: বললেন, আমেরিকা আবার মহান হবে
কমলাকে তার আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু জল্লাদের দয়ায় কমলা প্রাণে বেঁচে বনে পালিয়ে যান। কিছুদিন পরেই তিনি বুঝতে পারেন যে, তিনি গর্ভবতী। তিনি মানিক কুমার নামে একটি পুত্রের জন্ম দেন। কিন্তু তার ছেলে অন্য এক মহিলার সাথে বিনিময় করে যে একটি মৃত সন্তানের জন্ম দেয়। একদিন কমলা তার ছেলেকে খুঁজে পান, তিনি তার ছেলেকে ফেরত পাওয়া দাবি করলেন।
অবশেষে কমলা তার ছেলেকে ফিরে পান। অন্যদিকে, কাঞ্চন কুমার নীলপদ্ম নিয়ে তার সাম্রাজ্যে ফিরে আসেন এবং জানতে পারেন, যে তার স্ত্রী আর প্রাসাদে নেই। তিনি তৎক্ষণাৎ স্ত্রীর খোঁজে বের হন এবং অনেক দিন ধরে অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে স্ত্রী ও সন্তানের সন্ধান পান। সবাই আবার একত্রিত হয়ে তাদের প্রাসাদে ফিরে আসেন।