বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের সবচেয় বড় রাজনৈতিক অভিনেতা বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ছাত্রদের আন্দোলনে শুরুতে সর্বাত্মকভাবে পাশে থাকার কথা বলে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। পরে আবার আন্দোলনে নেই বলে অভিনয় করছে। ছাত্রদের আন্দোলন যখন সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সমাধানের পথে যাচ্ছিল, তখনই বিএনপি ও জামায়াত-শিবির পুরো আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে গেছে।”
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বন্দরের শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে যখনই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি হয়েছে, তখনই দেখলাম আমরা ঢাকা শহরে অগ্নিসন্ত্রাস, সেই তাণ্ডব, সেই জঙ্গি হামলা। কারণ ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়, তাহলে তাদের (বিএনপি-জামায়াত-শিবির) উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। এই কারণে তাড়াহুড়া করে সেই দিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ করা হলো। বিভিন্ন জায়গায় হামলা করা হলো। এমনকি পুলিশের ড্রেস পরে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরেও সেদিন নিরীহ ছাত্রদের ওপর আক্রমণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া বানাতে চায়; তারা এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। যেগুলো আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছি। ছাত্র আন্দোলন যখনই শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে যাচ্ছিল ঠিক তখনই স্বার্থান্বেষী মহল তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ঢাকার শহরে অগ্নিসন্ত্রাস, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, মেট্রোরেল স্টেশনে ভাংচুর, বিটিভি ভবনে আগুন, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার ইত্যাদি পুড়িয়ে দিল- তাদের উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র পৃথিবীর সাথে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে পরিত্যক্ত দেশ হিসেবে তৈরি করার মহাপরিকল্পনা ছিল। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার একটি সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে তাদের সেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি প্রতিহত হয়েছে। তাদের স্বপ্ন বাংলাদেশকে ভিখারি রাষ্ট্রে পরিণত করা, দেশের উন্নতি হতে না দেওয়া, বিদেশ থেকে উস্কানি পেয়ে তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। তাদের একমাত্র বাধা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।”
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “শেখ হাসিনা সরকারকে দেশবিরোধী অপশক্তি উৎখাত করতে চায়, যা কখনোই সম্ভব নয়। মানবদরদী, দেশদরদী শেখ হাসিনা সুস্থ থাকলে বাংলাদেশ সুস্থ থাকবে। তার একটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মানুষকে সুস্থ করে দিয়েছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন সুস্থ থাকেন, তার নেতৃত্বে আমাদের এগিয়ে যেতে সাহস ও শক্তি দেন।”
তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দারিদ্রতা জয় করে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। এটা তাদের পছন্দ নয়। দেশের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্বকে ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। এ ঘোষণা মানুষকে আনন্দিত করেছে। কারফিউ জারির শুরুতে দেশের সার্বিক অবস্থা ফিরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের লাইফ লাইন চট্টগ্রাম বন্দর এক মিনিটের জন্য বিচ্ছিন্ন হতে দেয় নাই। করোনা পরবর্তী মানব সৃষ্ট এ মহামারী সাহস ও দেশপ্রেম দিয়ে, বন্দরের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে, বন্দরকে সচল রেখেছেন এজন্য বন্দরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যে কোনও মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে রক্ষা করব- এটা হোক সকলের শপথ।”
এ সময় তিনি সংকটকালেও বন্দর চালু রাখার জন্য শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতেও দেশের উন্নয়নে সকলকে বন্দরের কর্মকাণ্ড চালু রাখার আহ্বান জানান নৌ প্রতিমন্ত্রী। পরে তিনি বন্দর শ্রমিক ও স্থানীয় দুস্থদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম সোহায়েল এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।