বেটা
জুলাই ১৫, ২০২৪, ০৯:৩৯ পিএম
আলোচিত জাহাঙ্গীর আলম
৪০০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আলোচিত জাহাঙ্গীর আলম যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই রবিবার রাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। খবর অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেলে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন জাহাঙ্গীরের বড় ভাই মো. মীর হোসেন। নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামে জাহাঙ্গীরের চারতলা বাড়ি আছে। বিকেলে ওই বাড়িতে গেলে নিচতলায় মীর হোসেনের সঙ্গে দেখা হয় এই প্রতিনিধির। বাড়ির ওপরের তিনতলা ফাঁকা পড়ে আছে। দোতলা ও তিনতলায় জাহাঙ্গীর থাকতেন। সেখানে এখন কেউ নেই। সব ফ্লোর তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে।
জাহাঙ্গীর এখন কোথায় জানতে চাইলে মীর হোসেন বলেন, “জাহাঙ্গীর দুই বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক সন্তান আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী দেশে আছে, তবে তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। রোববার রাতে তার কাছেই চলে গেছে জাহাঙ্গীর।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এতদিন জানতাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার খুবই ভালো সম্পর্ক। তার কার্যালয়ে আসা-যাওয়া আছে। হঠাৎ রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার কথা শুনে লজ্জিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ি। সন্ধ্যায় বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তখনও জাহাঙ্গীর দেশেই ছিল। এরপর রাতে শুনেছি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। তবে এখনও তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তার ব্যক্তিগত সব মোবাইল নম্বর বন্ধ আছে। এজন্য যোগাযোগ করতে পারছি না।”
বাংলা ট্রিবিউনের সংবাদদাতা জানান, বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ মেলেনি। মোবাইলে এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও কোনও জবাব দেননি তিনি।
গতকাল রোববার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তার বাসার সাবেক পিয়নের কাড়ি কাড়ি অর্থ সম্পদের বিষয়টি সামনে উঠিয়ে আনেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানালো এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী ওই পিয়নের পরিচয় নিয়ে ইঙ্গিত না দিলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, প্রকৃত অর্থে সেই পিয়ন হলেন জাহাঙ্গীর আলম। তাকে নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে ২০০৯-২০১৮ সালের দুই মেয়াদের পুরো সময় ও প্রধানমন্ত্রীর টানা তৃতীয় মেয়াদেরও কিছু সময় দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকার সময়ও (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা) জাহাঙ্গীর তার বাসভবন সুধা সদনে ব্যক্তিগত স্টাফ বা কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন।
গণমাধ্যম সূত্র বলছে, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও নিজের পরিচয় দিতেন ‘প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী’। এই পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য করতেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নানা তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদও বাগিয়ে নেন। নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে নিজের একটি রাজনৈতিক বলয়ও (প্রভাব-বৃত্ত) তৈরি করেছেন।
জেলার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর বুঝতে পেরেছেন যেকোনও সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এজন্য যেভাবেই হোক যেকোনও উপায়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছেন।
এদিকে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে তাদের হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য আগামী ৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া রোববার বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সব ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠায়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনও হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’র ২৩(১)(গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।
জাহাঙ্গীর আলমের যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-১ আসনের এমপি এইচ এম ইব্রাহীম দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সত্য নাকি মিথ্যা, তা জানি না।”
-20241121105543.jpg)
-20241027115010.png)
