পিলখানা হত্যার পুনঃতদন্ত কমিটি ৫ দিনের মধ্যে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম

পিলখানা হত্যার পুনঃতদন্ত কমিটি ৫ দিনের মধ্যে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

সাড়ে পনের বছর আগে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার’ নিশ্চিত করার জন্য এই কমিটিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, সিভিল সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্তদের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।

কমিটির সদস্য সংখ্যা ৫, ৭ বা ৯ জন হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বেশি থাকবে। আমরা ফ্রেশ ইনকয়ারি কমিটি গঠন করছি।”

উপদেষ্টা বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের দাবিতে অনেকেই ‘সোচ্চার’, কিন্তু কমিটিতে আসতে বললে অনেকে আর ‘আসতে চান না’।

“নাম সংগ্রহ করে তাদের সাথে কথা বলে পরবর্তীতে কমিটির নাম ঘোষণা করা হবে। যিনি সিনিয়র মোস্ট থাকবেন, তার নেতৃত্বেই কমিটি হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “সবাই একসাথে বসার পরে যদি মনে হয় যে (কমিটি না) কমিশন গঠন করা হবে, তাহলে সেটাই হবে। খুব একটা পার্থক্য থাকবে না।”  

প্রয়োজনে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বসে প্রয়োজনীয় মতামত নেওয়া হবে বলেও এক প্রশ্নের জবাবে জানান স্বররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।

সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।

হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।

ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়। ওই ঘটনার তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন/কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত মাসে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৫ নভেম্বর হাই কোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়। কিন্তু ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান গত ১৫ ডিসেম্বর আদালতকে বলেন, পিলখানা হত্যা মামলার শুনানি চলছে আপিল বিভাগে। বিস্ফোরক মামলার শুনানি জজ আদালতে চলমান। তাই রিট আবেদনকারীর চাহিদা অনুসারে প্রস্তাবিত কমিটি গঠন আদালতের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আপাতত কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না।

Link copied!