চলছে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধ। রাজধানীতে অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন কিছুটা চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রায় বন্ধ। ফাঁকা রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো। সেই সুযোগে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা কাজে লাগাচ্ছেন অবসর সময়টুকু।
সবসময় যাত্রী পরিবহনে ব্যস্ত থাকায় পরিচর্যা সম্ভব না হওয়ায় অবরোধ কর্মসূচির সময়টা কাজে লাগাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। সায়দাবাদ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায় দূরপাল্লার যানবাহনগুলোতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ যত্ন, করা হচ্ছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও ধোয়া মোছার কাজ।
টার্মিনালে ঢুকতেই চোখে পড়ে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস ধোয়ার কাজ। একজন পরিবহন শ্রমিক যত্ন সহকারে বাসের ধোয়া মোছার কাজ করছেন।
তিনি জানান, ‘অবরোধের সময় গাড়ি-ঘোড়া চলছে না, এই সুযোগে গাড়িগুলো ধোয়া হচ্ছে। সবসময় তো ভিতরে বাইরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা যায় না তাই এখন ভিতর-বাইরে ভালোমতো ওয়াশ করছি।’
পাশেই আরেকটি বাস ধুতে দেখা গেছে আরও একজন পরিবহন শ্রমিককে। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সবসময় তো গাড়ি রানিংয়ে থাকে। টুকিটাকি কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করা হয় না। তাই হরতাল-অবরোধের মধ্যে আমরা গাড়িগুলার কাজ করাই আর পুরা ক্লিন করি ভিতরে বাইরে।’
কিছুদূর সামনে যেতেই চোখে পড়ে বাসে রং করার কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। সেখানে থাকা পেইন্টারদের দেখা যায় হাতে রং মিশিয়ে, রং তুলির আঁচড়ে বাসকে নতুনের মতো রঙিন করতে ব্যস্ত তারা।
বাসে পেইন্টিং-এর কাজ করতে থাকা একজন শ্রমিক জানান, ‘অবরোধ গাড়িটাড়ি চলে না, এই সময় বসা গাড়িতে মালিকেরা বাসে রং চুনা করায়া নেয় আমরাও কাজ করি।’
এদিকে পরিবহন সারাতে অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছে টার্মিনালে থাকা মেকানিকরা। অবরোধে গাড়ি না চলায় ব্যস্ততা বেড়েছে তাদের।
পরিবহন মেকানিক মানিক দ্য রিপোর্টকে জানান, রাস্তায় গাড়ি চললে তা সার্ভিস করাতে হয় সবসময় কিন্তু মাস্টার সার্ভিস দেয়া হয় অবরোধে। যেহেতু গাড়ি চলাচল নাই তাই বেশিরভাগ মালিকরা তাদের গাড়ির ইঞ্জিন ওয়াশসহ অন্যান্য কাজগুলো করিয়ে নিচ্ছেন। অবরোধ শেষে গাড়ি নামাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মকবুল আহমেদ ভূঁইয়া দ্য রিপোর্টকে জানান, এদেশে হরতাল, নৈরাজ্য ভাংচুর, খুন খারাবি এটা আমরা চাই না।
তিনি আরও বলেন, ‘গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন দেয় না তারা মালিকের সাথে বুঝুক আমাদের গাড়ি কেন জ্বালায় রাস্তায়, আমাদের কি অপরাধ? এইসব বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মোহাম্মদ মনির দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা এই হরতাল অবরোধ মানি না, প্রতিদিন একটা গাড়ি যদি বসে থাকে, মাঠ ভাড়া, দারোয়ানের টাকা, মাসিক মিস্ত্রির খরচ, চালকের বেতনসহ আমাদের খরচ হয় গাড়ি প্রতি এক হাজার টাকারও বেশি। এই টাকা কে দিবে?
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবরোধ আতঙ্কেই ছাড়া হচ্ছে না দূরপাল্লার বাস। অন্যদিকে যাত্রী সংকট ও বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। এই ফাঁকে অবসরে বিশেষ যত্ন পাচ্ছে গণপরিবহনগুলো।