সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার অংশ হিসেবে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ টোল প্লাজায় অগ্নি সংযোগ করেছিল দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে হলেও এখন পুড়ে যাওয়া টোল প্লাজার খাঁচায় বসেই চলছে ম্যানুয়ালি অর্থ আদায়। আংশিক আকারে ঠিক হতেও প্রায় ২ মাস সময় লাগবে এই টোল প্লাজার।
ঢাকার গুলিস্থান থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যাত্রাবাড়ী হয়ে চিটাগাং রোড, ডেমরা ও ধোলাইপাড় হয়ে গাড়ি যাতায়াত করে থাকে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী টোল প্লাজা থেকেই সবচেয়ে বেশি যান চলে থাকে। চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী ও কুমিল্লাগামী বাসের একমাত্র রুট এই রাস্তা। যানজটের দুর্ভোগ এড়াতে ফ্লাইওভার দিয়েই যাতায়াতের সুবিধাভোগ করছিল এই গণপরিবহন। তবে অগ্নিকাণ্ডের ফলে অটোমেটিক পদ্ধতির বদলে ম্যানুয়ালভাবে টোল আদায় চলছে।
আংশিক চালু হতে লাগবে দুই মাসেরও বেশি সময়
টোলপ্লাজায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে একেকটি বুথে তিনজন কাজ করছে। যেখানে আগে একজন কাজ করলেই হতো। বর্তমানে বুথের একজন অর্থ লেনদেন, একজন মোবাইল টোলার দিয়ে টিকেট বের করা ও অন্যজন গাড়ির হিসাব রাখছে। যেখানে এই পুরো সিস্টেমই ছিল অটোমেটিক। এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। প্লাজার কর্মীরাও রয়েছেন আতঙ্কে।
রহিম হোসেন নামে এক কর্মী জানান, “এখন আমরা মাস্ক পরে আছি। আবার যদি আক্রমণ হয় সেজন্য আপাতত পরিচয়টা লুকিয়ে রাখছি।”
এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, টোল প্লাজার অটোমেটিক মেশিনের কোনও অস্তিত্ব নেই ফলে সেখানের রাস্তা সমান করা হচ্ছে। পাশে বসানো হচ্ছে নিরাপত্তা বেষ্টণী। সেই সঙ্গে রাস্তা কেটে ক্ষতিগ্রস্ত তার অপসারণের কাজও চলছে। তবে এখনও নতুন করে অটোমেটিক মেশিন স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়নি।
টোল ম্যানেজম্যান সিস্টেমের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী খান মো. ইমরুল হাসান বলেন, “আমরা আপাতত যাত্রাবাড়ীর একটি অংশকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে অটোমেটিক মেশিন বসানোর কাজ করছি। কেননা এখান থেকে সবচেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করে থাকে। যাত্রাবাড়ীর অংশে দুটি টোল প্লাজা রয়েছে। যার একটি অংশ পুরোপুরি সচল করতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগবে। এছাড়া সব মিলিয়ে ৬ মাস সময় লাগবে ডেমরাসহ অন্যান্য অংশ পুরোপুরি চালু হতে।”
ফ্লাইওভারের যাতায়াত দ্রুত করতে টোল প্লাজায় আরএফআইডি ট্যাগ ও কিউইআর কোডের ব্যবস্থা ছিল। যেখানে একটি গাড়িতে ট্যাগ থাকলে কোনও কর্মী ছাড়াই সরাসরি টোল দিতে পারত। আর কিউআর কোড স্ক্যান করেও দেওয়া যেত এই টোল। ফলে কোনও গাড়ি সেখানে উপস্থিত না থেকেই টোল দিতে পারতো। এক্ষেত্রে তাদের আগেই সেই ট্যাগ ও কিউআর কোডের বিপরীতে অর্থ জমা থাকতো। কিন্তু এখন কোনও বুথ না থাকায় ট্যাগ ও কিউআরধারীরা পরেছে বিপাকে। তাদেরও এখন নগদ অর্থ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
শুরুতে অনেকেই বাগবিতণ্ডার করলেও পরিস্থিতি উপলব্ধি করে এখন ট্যাগধারীরাও নগদ অর্থে টোল দিচ্ছে বলেও জানান ইমরুল হাসান।
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের হেড অব ট্রাফিক মো. নাঈম উদ্দিন খান বলেন, “টোল প্লাজার পুরো ব্যবস্থা ফ্রান্সের প্রযুক্তিতে করা। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছি। তবে তবে এই ধরনের জিনিস এলসির মাধ্যমে আনা,শিপমেন্ট ইত্যাদির কারনে সব মিলিয়ে ছয় মাস লাগবে আগের মতো সচল হতে।