অর্থনৈতিক অঞ্চলে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি বড় সেতু স্থাপন করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার পর সারাদেশে ব্রিজ সংস্কারের প্রকল্পেরই ধীরগতি হয়েছে। একটি ব্রিজের বদলে ২২ টি ব্রিজ নির্মাণ করার পর নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়নের আশঙ্কা দেখা হয়। এছাড়া প্রকল্প সংশোধন করে পরামর্শক ব্যয়ও অতিরিক্ত ধরা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ওয়েস্টার্ন ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
বাস্তব লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক অর্জন
২০১৫ সালের নভেম্বরে ২ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন করা হয়। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এর ক্রমপঞ্জিভুত ব্যয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দে ৫৯ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডির মতে চলমান অবস্থায় যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
একটি ব্রিজ নিয়ে সমস্যা
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যর একটি ছিল দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করা। এরই প্রেক্ষিতে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নরসিংদীর পলাশে এ. কে. খান অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ টি ব্রিজ নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু এই ব্রিজ নির্মাণ না করে তার বদলে নতুন করে ২২ টি ছোট ব্রিজ নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু পরিকল্পনা নেয়ার পর ডিপিপি সংশোধনে প্রায় ২৪ মাস বিলম্ব হয়। এছাড়া মূল ডিপিপিতে ২২ টি ব্রিজের কথা উল্লেখ করাতে প্রায় ৩৬ মাস বিলম্ব হয়।
বিদেশি বিনিয়োগ না পাওয়ায় বিলম্ব
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার আলী বলেন, প্রকল্পের শুরুতে এ. কে. খান অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্রিজটি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে বিনিয়োগ না পাওয়া যায়নি বিধায় নিজস্ব অর্থায়নে অন্যত্র ২২ টি ব্রিজ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। বিনিয়োগের এই সমস্যাটাই প্রকল্পর ধীরগতির কারন হয়ে দাড়ায়।
তিনি আরও বলেন, করোনা প্রথম ঢেউয়ে সকল প্রকল্পের ধীরগতি হয়েছে। অনেক বিষয় এখনও চূড়ান্তভাবে যোগ করা হয়নি বিধায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। তবে নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
অতিরিক্ত পরামর্শক ব্যয়
প্রকল্প সংশোধনের পর মূল পরামর্শক সেবার পরিমান ১৬৯৬ জনমাস হ্রাস পেলেও ব্যয় বৃদ্ধি প্রায় ১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এছাড়া দিনাজপুর,ঠাকুরগাও এবং পঞ্চগড়ের ব্রিজ নির্মাণ ক্রুটিপূর্ণ হয়েছে। এদিকে পরিবেশ বান্ধব রেলিং দেয়ার বদলে অনেক ব্রিজেই সরাসরি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে।
মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি
প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপন করে জাতীয় অর্থনীতির উন্নয় সংবর্ধিত করা। কিন্তু বৈদেশিক বিনিয়োগ না পাওয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্রিজ না করায় এ উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া প্রকল্পের শুরুতে দারিদ্র হ্রাস করার বিষয়ে বলা হলেও প্রকল্পে কোন প্রক্রিয়ায় এটা করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়নি।